প্রথম থেকেই কেন্দ্রের ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই আইন বাংলায় কার্যকর হবে না। মোদী সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছে। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই হিংসা ছড়িয়েছিল মুর্শিদাবাদে। সেই জেলাতে দাঁড়িয়েই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'ওয়াকফ নিয়ে আমাদের এখানে কোনও প্রশ্ন নেই। এই নিয়ে আমি কিছু বলব না। ওয়াকফ নিয়ে বলার থাকলে দিল্লিতে যান। বাংলায় আমি আছি মাথায় রাখবেন।' তিনি জানান, তাঁর সরকার কোনও ধর্মেরই সম্পত্তি অধিগ্রহণের পক্ষে নয়।
প্রসঙ্গত, দু’দিনের মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়াকফ অশান্তিতে সম্প্রতি অশান্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। তারপর এই প্রথম মুর্শিদাবাদ গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে বহরমপুরে পৌঁছোন তিনি। মঙ্গলবার সেখান থেকে ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ, সুতির মতো উপদ্রুত এলাকায় যান তিনি। এদিন প্রথমে কপ্টারে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বিডিও অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সুতির সভাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াকফ নিয়ে আমি আর বলব না। ওয়াকফ আমাদের এখানে হবে না। বাংলায় কোনও সমস্যা নেই। আমি আছি। আন্দোলন করতে হলে দিল্লিতে যান। আমি হিন্দু, মুসলিম , শিখ, খ্রিস্টান কারও জমি অধিগ্রহণ করি না। আপনার অধিকার রক্ষার গ্যারান্টি আমাদের।
মমতা আরও বলেন, "কথা দিন কারও কথায় দাঙ্গা করবেন না। দাঙ্গা করলে সবাই যদি থাকেও, দিদি থাকবে না। আমি আলো চাই, অন্ধকার নয়। ধর্ম মানে মানবিকতা, ধর্ম মানে ভক্তি, ধর্ম মানে সম্প্রীতি, ধর্ম মানে সংস্কৃতি। আমি সব ধর্মকে ভালবাসি। তাই বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। রক্তদান শিবিরে যখন রক্ত দান করা হয়, সেই রক্ত কার, কোথায় যায় কেউ জানে না। হিন্দুর রক্ত মুসলিমের শরীরে, মুসলিমের রক্ত শিখের শরীরে চলে যায়। রক্ত জীবন বাঁচায়, রক্ত প্রাণ কাড়ে না।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'বিজেপি কিংবা কোনও মৌলবাদী সংগঠনের কথা শুনে প্ররোচিত হবেন না। আপনারা নিজেরা ভাগ হওয়ার থেকে আমার গলাটা দেহ থেকে ভাগ করে দিন। তাতে আমি খুশি হব।' সেইসঙ্গে সুতি, ধুলিয়ান এবং ফরাক্কার মানুষদের জন্য নতুন মহকুমা অফিস গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সুতি, ফরাক্কা ও ধুলিয়ানকে নিয়ে মুর্শিদাবাদে তৈরি হবে নয়া মহকুমা। ওয়াকফ অশান্তিতে সম্প্রতি অশান্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলায় নজরদারি বাড়াতে এই নতুন মহকুমা তৈরির সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।