ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'দানা’। বাংলার সাগরদ্বীপ সংলগ্ন উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের। আর সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে আগামী ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের ন’টি জেলার সব স্কুলে ছুটি থাকবে, ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বুধবার থেকেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। আবহবিদদের অনুমান, বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ওড়িশার পুরী এবং এই রাজ্যের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও অংশ দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার উপর পড়তে পারে।
বাংলার ৭ জেলায় তাণ্ডব চালাতে পারে দানা
২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে ওড়িশার পুরী ও সাগর দ্বীপের মধ্যে ল্যান্ডফল হতে পারে। ১২০ কিলোমিটার গতিবেগ হতে পারে এই ঝড়ের। বাংলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এই ৭ জেলায় সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাতে পারে ডানা। এই নিয়ে নবান্ন এদিন স্বয়ং সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘর্ণিঝড়ের দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। এ ছাড়াও, এই তিন জেলার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে প্রভাব পড়তে পারে। এই জেলাগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ইন্ট্রিগ্রেটেড কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সেই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। বুধবার থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকিং চলছে সর্বত্র।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি (NDRF)। পর্যটকদের গতিবিধিও নজরে রাখা হচ্ছে। উপকূলে ফেরি সার্ভিস বন্ধ আছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আগে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বারও সেই সব ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুত রাজ্য প্রশাসন। উপকূলবর্তী নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। দুর্যোগের আশঙ্কা কাটার পরই আবার ফেরি চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করারও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আগেভাগেই জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্যোগ পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের।
দানা মোকাবিলায় প্রস্তুতি কলকাতা পুরসভার
ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতাতে। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকছে কলকাতা পুরসভাও। দু'দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে পুরসভার কন্ট্রোল রুম। সব রকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে পাম্পিং স্টেশনগুলিতে। মোট ৭৯টি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন মিলিয়ে ৪৫০টি পাম্প রয়েছে। সব পাম্পই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিন চালু রাখা হবে। সেই সঙ্গে থাকবে অস্থায়ী পাম্পের ব্যবস্থাও। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বাতিস্তম্ভগুলি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার নিকাশি বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।