পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার অধীন গৌরা সমবায় সমিতি তথা সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা তুলে নিচ্ছেন টাকা। দু’সপ্তাহে দুই কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকরা জানাচ্ছেন, সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক নয় ৷ সেখানে বিরোধীদের মনোনোয়ন করতে দেওয়াই হচ্ছে না ৷ জোর করে ক্ষমতা দখল করছে শাসকদল ৷ তাই ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা নেই দেখে নিজেদের জমা রাখা টাকাই তুলে নিতে শুরু করেছেন ৷
জানা যাচ্ছে ১০ দিনে দুই কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার অধীন গৌরা সমবায় সমিতি তথা সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা তুলে নিচ্ছেন টাকা। নিজেদের টাকা নিজেরা তুলতেই পারেন। তবে, এত কম সময়ে এরকম টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক কেন? গ্রাহকদের একাংশ বলছেন, ‘কোন ভরসায় টাকা রাখব? যেখানে নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের মনোনয়নই করতে দেওয়া হলো না। সেখানে আমাদের টাকা যে সুরক্ষিত থাকবে, তার কী নিশ্চয়তা আছে।’
প্রসঙ্গত,গত ১৭ ও ১৮ জুন এই সমবায় সমিতির নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব ছিল। আর মনোনয়নকে ঘিরেই ধুন্ধুমার বেঁধে যায় শাসক-বিরোধী দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। পুলিশের তরফেও বিরোধীদের আটকানো হয় বলে অভিযোগ। বিগত সময়ে এই সমবায় ব্যাঙ্ক বামেদের দখলে থাকলেও, এ বার একজন বিরোধী প্রার্থীকেও নমিনেশন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী বাম জোটের দুই প্রার্থীকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলেও সিপিএমের অভিযোগ। শেষমেশ এই ব্যাঙ্কের ৫৩টি আসনেই কেবলমাত্র তৃণমূল প্রার্থীরাই মনোনয়ন জমা দেন বলে দাবি। এই ঘটনার পর থেকেই অর্থাৎ ১৯ জুন থেকেই ওই সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা দলে দলে গিয়ে নিজেদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা তুলে নিচ্ছেন। লাইন দিয়ে টাকা তোলার হিড়িক দেখে মাথায় হাত সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। বাধ্য হয়েই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছেন, একসঙ্গে কুড়ি হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। যদিও, কর্তৃপক্ষের সেই দাবি মানতে রাজি নন গ্রাহকরা।
টাকা তুলতে আসা গ্রাহকেরা বলেন, ‘আতঙ্কে আমরা টাকা তুলে নিচ্ছি। কোন ভরসায় টাকা রাখব? যেখানে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হয়নি। মনোনয়নকে ঘিরে মারধর, অশান্তি হয়। সেখানে আমরা আমাদের টাকা কোন ভরসায় গচ্ছিত রাখব? আমাদের টাকা যে সুরক্ষিত থাকবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সৈকত জানা বলছেন, ‘এটা ঠিক যে গ্রাহকদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও অনেকেই মানছেন না। ১৯ জুনের পর থেকে শুক্রবার, ৪ জুলাই অবধি দুই কোটি টাকার বেশি তুলে নেওয়া হয়েছে।’ যার কারণে ২০ জুন তারিখ থেকে সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা তোলার ম্যাক্সিমাম লিমিট করে দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক: শাহজাহান আলি