ভোটার তালিকায় নাম তোলা ইস্যুতে ফের বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতি, উপজাতিদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। এমনকী জেনারেলরাও এও চক্রান্তর শিকার হতে পারেন। তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, কেউ কোনও ফর্ম ফিলাপ করবেন না।
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। তারপরই বক্তব্য দিতে উঠে কেন্দ্র সরকার, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে একযোগে আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, এনআরসি করিয়ে বাংলার ভোটারদের বাদ দিতে চাইছে কেন্দ্র। বলেন, 'না জেনে কোনও ফর্ম ফিল আপ করবেন না। তাহলে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। তখন জোর করে এনআরসি করে দেবে।'
ভোটার তালিকা কীভাবে চেক করবেন?
ভোটার তালিকা দেখার নিয়মে বদল এসেছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, নতুন করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাই আগের তালিকা দেখলে হবে না। নতুন তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর তা চেক করে নিতে হবে। বলেন, 'যাঁরা ভাবছেন এপিক কার্ড আছে, আর কিছু করতে হবে না তাঁদের এই ধারণা ভুল। ভোটার লিস্টে নাম আছে কি না আগের তালিকা দেখলে হবে না। ফের দেখতে হবে। ২০০২ সালে যাদের জন্ম হয়েছে তাঁদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট লাগবে।'
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য যদি বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র প্রয়োজন হয় তাহলে সমস্যা হবে। তাঁর দাবি, যাঁরা বলছেন বাবা-মায়ের জন্ম প্রমাণপত্র আবশ্যিক তাঁদের বাবা-মায়ের নেই। এরপর ফের পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ফের অভিযোগ করেন, বাংলার মানুষের উপর অত্যাচার হচ্ছে ভিন রাজ্যে। গুরগাঁও, অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, মতুয়াদের উপর অত্যাচার হচ্ছে মুম্বইয়ে। তিনি জানান, 'বাংলায় কথা বলে তাই একজনকে খুন করা হল মুম্বইয়ে। কুচিয়ে কুচিয়ে কাটা হয়েছে। তাহলে তো প্রতিবাদ করবই। নিজের ভাষায় কথা বলা অপরাধ?
যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, আইন মেনে তাঁরাও ভারতের নাগরিক। যারা ভারতের নাগরিক নন তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে তৃণমূলের কোনও আপত্তি নেই। সেটা কেন্দ্রের ব্যাপার। রাজ্য তাতে হস্তক্ষেপ করবে না।'
আগের সুর বজায় রেখে তিনি সেখানকার স্থানীয় মানুষদের বাংলা ভাষার পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। বলেন, 'রুখে দাঁড়াবেন মা লক্ষ্মীরা। ছেলে-মেয়েরা। যে শ্রমিকরা ফিরে আসছেন, তাঁদের চিন্তা নেই। শ্রমিকরা যোগ্য বলেই তো তাঁদের ভিনরাজ্যে ডেকে নিয়ে যায়। আর নির্বাচনের এত আগে কেন অফিসারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের পাশে সরকার থাকবে। টিচাররা চাকরি যাতে পান, সেজন্য পরীক্ষার ব্যসস্থা করেছে সরকার।'
মেয়েদের পাশে থাকার বার্তা
ঝাড়গ্রাম বা জঙ্গলমহলে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওযার জন্য চাপ দিয়ে থাকে পরিবারের সদস্যরা। তা নিয়ে মা-বাবাদের পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন মেয়েরাও ছেলেদের মতো সমান পারদর্শী, তাঁদের যেন বিয়ের জন্য চাপ না দেওয়া হয়, লেখাপড়া শেখানো হয়, বলেন তিনি।