চুরির অপবাদ মেনে নিতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছিল পাঁশকুড়ার ১২ বছরের কিশোর। সেই ঘটনায় এবার অভিযুক্ত দোকানদার তথা সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এবার এফআইআর দায়ের করা হল। রবিবার ওই কিশোরের পরিবার পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতে রুজু হয় মামলা।
প্রসঙ্গত, পাঁশকুড়ার গোসাইবেড় গ্রামের বছর বারোর কৃষ্ণেন্দু দাস বেরিয়েছিল চিপস কিনতে। দোকানে গিয়ে দোকানদারকে অনেকবার ডাকাডাকি করে। কিন্তু দেখতে পায়নি দোকানদারকে। দোকানের বাইরেই পড়েছিল হাওয়ায় উড়ে আসা চিপসের প্যাকেট। সেই চিপসের প্যাকেট তুলে সাইকেলে করে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিল। এরপরেই অভিযোগ, স্থানীয় ওই দোকানদার যিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ারও ওই নাবালককে চোর অপবাদ দেয় ভরা বাজারে। ঘটনার পরে ওই নাবালকের মা দোকানে এসে শাসন করেন ছেলেকে। কিন্তু এই চোর অপবাদ মেনে নিতে পারেনি ওই নাবালক। বাড়ি ফিরে একটি সুইসাইড নোট লিখে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে সে। যে নোটে লেখা ছিল “মা আমি চুরি করিনি…।” ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে।
চিপসকাণ্ডে এবার সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃত বালকের কৃষ্ণেন্দু দাসের মা সুমিত্রা দাস পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। গত কয়েকদিনে একাধিকবার সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সুমিত্রদেবী। কঠোর শাস্তি চেয়েছেন তিনি। এবার থানায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন। গত বৃহস্পতিবার ছেলের মৃত্যুর পর একাধিকবার শুভঙ্করের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কৃষ্ণেন্দুর মা। কিন্তু, তখনও থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি। এই নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নিজেদের মানসিক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, শুভঙ্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন। শেষপর্যন্ত রবিবার সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়া থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের ভাই দীপঙ্কর দীক্ষিত, স্ত্রী নিশা দীক্ষিত ও বাবা সূর্যকান্ত দীক্ষিতেরও। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুমিত্রা দাস। ঘটনার পর থেকে পলাতক শুভঙ্কর।
এদিকে কৃষ্ণেন্দুর মৃত্যুর পর যে কাগজের সুসাইড নোটটি সামনে এসেছিল, সেখানে খাতার উপরে কৃষ্ণেন্দুর নাম, রোল নম্বর ও শ্রেণি লেখা রয়েছে। তার নিচে লেখা রয়েছে, ‘মা আমি বলে যাচ্ছি যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম চুরি করিনি।’ সেই নোটটি পরিবারের কাছ থেকে পরীক্ষার জন্য নিয়েছে পুলিশ। পাঁশকুড়া থানা সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে সুসাইড নোটে হাতের লেখায় গরমিল রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের। ওই নোটের লেখাটি সন্দেহজনক। প্রয়োজনে হস্তলেখা বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।