সন্দেশখালিতে এক শিখ পুলিশ অফিসারকে খালিস্তানি বলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শিখ সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে যে সম্প্রতি সন্দেশখালিতে বিজেপির কেউ একজন শিখ আইপিএস অফিসারকে খালিস্তানি বলেছিল, যার কারণে শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিশেষ সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে কর্মরত জসপ্রীত সিং-এর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে তিনি বলছেন, 'আপনি আমাকে খালিস্তানি বলছেন কারণ আমি পাগড়ি পরে আছি।'
পরে পাঞ্জাব বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা এবং কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়াও একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন এবং এই ঘটনাকে লজ্জাজনক বলেছেন। তার এক্স পোস্টে, তিনি বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীরা একজন শিখ আইপিএস অফিসারকে খালিস্তানি বলছেন কারণ তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। শিখদের নিয়ে বিজেপি কি এটাই ভাবছে? যারা এই গুন্ডামি চালিয়েছে এবং শিখদের খালিস্তানি বলার করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'
ঘটনার সূত্রপাত ধামাখালিতে। মঙ্গলবার সকালে সন্দেশখালি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে ধামাখালিতে তাঁর পথ আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকেন শুভেন্দু। তার মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ আসে, শুভেন্দু সন্দেশখালি যেতে পারবেন। এদিকে শুভেন্দু সন্দেশখালি যেতে চাইলেও তাঁকে যেতে বাধা দেয় পুলিশ। তাদের তরফে জানানো হয় কোর্টের নির্দেশ এখনও আসেনি তাঁদের কাছে। তখনই এক আইপিএস অফিসারের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেতারা। তখনই কেউ খালিস্তানি বলেন অভিযোগ। আর তাতে রেগে যান সেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার। তিনি বলতে থাকেন, 'আমাকে খালিস্তানি বলা হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব। আমি পাগড়ি পরে আছি বলে আমাকে একথা কেন বলা হল। আমি যদি পাগড়ি না পরতাম তাহলে কি আমাকে খালিস্তানি বলা হত?' যদিও সেই সময় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, কেউ খালিস্তানি বলেনি। সেই পুলিশ অফিসার বলতে থাকেন, 'আপনারা পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে পারেন। তবে আপনারা আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলতে পারেন না। এটা আপনাদের সংস্কৃতি। এটা কোনওভাবেই প্রত্যাশিত নয়।'
এই ঘটনা নিয়ে ট্যুইট করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, 'আজ, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি নির্লজ্জভাবে সাংবিধানিক সীমানা অতিক্রম করেছে। তাদের কাছে পাগড়ি পরা প্রত্যেক ব্যক্তিই খালিস্তানী। শিখ ভাই ও বোনদের খ্যাতি ক্ষুন্ন করার যে প্রচেষ্টা, তার তীব্র নিন্দা জানাই। দেশের প্রতি তাদের ত্যাগের কথা সবার জানা। আমরা বাংলার সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় দৃঢ়ভাবে রয়েছি। যারা তা ব্যাহত করার প্রচেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।'
বিতর্কে মুখ খোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি দাবি করেন, তাঁরা এমন কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর কথায়, 'পাকিস্তানি-খলিস্তানি এসব বলার দরকার নেই আমাদের। ওই অফিসার রূঢ় ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। আমি বা আমার সঙ্গীরা কোনও ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলিনি, বলবও না। আমরা গুরুনানকজি কে প্রণাম করি। শিখ ধর্মকে সম্মান করি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিখদের।'