আঠারো মাস ধরে ডায়ালিসিস চলছে। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানিয়েছিল দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। একমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপন করলে জীবন বাঁচতে পারে। মেয়েকে মৃত্যু মুখে যেতে দেখে কোনও মা কি আর চুপ করে হাতে হাতে গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন। মেয়েকে নতুন জীবন দিতে তাই নিজের কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মা। যে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পর কোলে পিঠে মানুষ করেছেন, সেই মেয়েকে নতুন জীবন দিতে চান তিনি।
হুগলির পান্ডুয়ার খিরখুন্ডি মাঝেরপাড়া গ্রামে বাড়ি জাহির হোসেন শেখের। স্ত্রী আজমিরা খাতুন বছর পাঁচেক ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন। বারো বছর আগে পান্ডুয়ারই সরাই কুলটি এলাকার আজমিরা খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ৯ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। তবে বছর পাঁচেক ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন আজমিরা। ডাক্তার বলেছে দুটো কিডনি খারাপ হয়ে গেছে। একমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপন করলে তার জীবন বাঁচতে পারে। আজমিরার স্বামী জাকির হোসেন শেখ দিনমজুরের কাজ করেন। চিকিৎসার খরচ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা । এরমধ্যে কোথায় কিডনি পাবেন, কে দেবে? এই চিন্তাই দিনরাত মাথায় ঘুরছিল। আপাতত একটা কিডনি হলেই প্রাণে বাঁচতে পারে আজমিরা। মেয়েকে মৃত্যুর মুখে যেতে দেখে এগিয়ে এলেন মা জাহিরা বিবি। মেয়েকে বাঁচাতে তিনি নিজের একটা কিডনি দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আজমিরা বলেন- বিছানায় শয্যাশাই হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় আঠারো মাস ধরে ডায়ালিসিস চলছে। হাঁটাচলা করতে পারতাম না। একবার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে কিডনি থেকে পুঁজ বের করেন ডাক্তার। সেখানেও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চলছে আজমিরার চিকিৎসা। মা ও মেয়ের সব পরীক্ষা হয়ে গেছে। সেখানের ডাক্তাররা জানিয়েছেন পুজোর পর ভর্তি হতে। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরও আসতে পারে নানা জটিলতা। অনেক ওষুধ লাগবে। মা এবং মেয়ে, দুজনের জন্যই অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? তা নিয়েA দুশ্চিন্তা আছে।
আজমিরার মা জাহিরা বিবি বলেন- সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পর কোলে পিঠে মানুষ করেছেন, সেই আত্মজাকে নতুন জীবন দিতে চান। কিডনির জন্য অনেক জায়গায় চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কোথাও পায়নি। আমার সঙ্গে মেয়ের কিডনি মিলেছে, চিকিৎসকদের কথামতো সমস্ত পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। জাকির হোসেন জানান নিজের বসতবাড়িটা বিক্রি করে দেবার কথা একবার ভেবেছিলাম। বিক্রি করলে হয়তো লাখ পাঁচের টাকা হবে। কিন্তু তারপর পথে বসতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি।
সংবাদদাতা- রাহি হালদার