Advertisement

Murshidabad Ground Report: কীভাবে ও কারা হিংসা ছড়াল মুর্শিদাবাদে? পড়ুন গ্রাউন্ড রিপোর্ট

Murshidabad Violence Ground Report: গত শুক্রবার, অর্থাৎ ১১ এপ্রিল এবং পরের দিন শনিবার ১২ এপ্রিল হিংসায় দীর্ণ হয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, ঘোষপাড়া, বেতবোনা, সামশেরগঞ্জ, জাফরাবাদ এবং ডিগরি। শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে পদ্মা নদী পার হয়ে অন্য জেলা মালদহে গিয়েছেন। অনেকে আবার আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাকুরে আশ্রয় পেয়েছিল। কিন্তু এই হিংসার আসল কারণ কী ছিল? 

মুর্শিদাবাদ হিংসার গ্রাউন্ড রিপোর্ট।মুর্শিদাবাদ হিংসার গ্রাউন্ড রিপোর্ট।
শুভঙ্কর মিত্র
  • মুর্শিদাবাদ,
  • 19 Apr 2025,
  • अपडेटेड 1:25 PM IST
  • মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, ঘোষপাড়া, বেতবোনা, সামশেরগঞ্জ, জাফরাবাদ এবং ডিগরিতে হিংসা।
  • ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ থেকে ছড়ায় হিংসা।
  • মুর্শিদাবাদের গ্রাউন্ড রিপোর্ট।

মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। একটা সময় অর্থনৈতিক প্রাচুর্যে টক্কর দিত লন্ডনকে। গত কয়েকদিন যাবৎ সেই মুর্শিদাবাদ সংবাদ শিরোনামে। যা তার অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গত শুক্রবার, অর্থাৎ ১১ এপ্রিল এবং পরের দিন শনিবার ১২ এপ্রিল হিংসায় দীর্ণ হয়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad Violence) সুতি (Suti), ধুলিয়ান (Dhuliyan), ঘোষপাড়া (Ghosh Para), বেতবোনা, সামশেরগঞ্জ (Shamsherganj), জাফরাবাদ (Jafrabad) এবং ডিগরি (Digri)। শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে পদ্মা নদী পার হয়ে অন্য জেলা মালদহে গিয়েছেন। অনেকে আবার আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাকুরে। এই হিংসার আসল কারণ কী? সেটাই খুঁজতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল bangla.aajtak.in।  

ধর্মের ভিত্তিতে কোনও এলাকাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নেই এই প্রতিবেদকের। কিন্তু হিংসার শিকড় খুঁজতে গেলে 'ধর্ম' ফ্যাক্টর। স্বাধীনতার পর থেকেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। সেই জেলার মুসলিম জনগোষ্ঠী কীভাবে হিংসার ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়াল? এটা বোঝা যাক। মুর্শিদাবাদের একটা বড় অংশের মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক (Murshidabad Migrant Workers)। ইদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি এসেছেন তাঁরা। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ সারা দেশে ইদ উদযাপন হয়। ২ এপ্রিল সালে দিনভর বিতর্কের পর লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা পরিণত হয় আইনে। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দেয় ইসলামিক সংগঠনগুলি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিবাদ করেন। মুর্শিদাবাদেও (Murshidabad Unrest) তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ছোটবড় সভা-সমাবেশ হয়েছে। মসজিদগুলি থেকেও ভাষণ দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য একটাই- ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা। শুধু সভা-সমাবেশেই থেমে থাকেনি প্রতিবাদ। হোয়াটসঅ্যাপেও উস্কানিমূলক পোস্ট করা হয়েছিল। তাতে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়েছে। নেটমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম।

কী রকম মিথ্যা তথ্য?

ধুলিয়ানের বিধানসরণী বাজারে এক মুসলিম যুবক বললেন,'ওয়াকফ আইনে মুসলিমদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। মসজিদ, কবরস্থান কেড়ে নেওয়া হবে'। সুতির শিক্ষক ও সিপিএম নেতা জুলফিকার আলি বলেন,'ওয়াকফ আইন বিষয়টি জটিল। অনেকেই জানেন না। আমার মনে হয়, নতুন আইনে মুসলিমদের কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা সহজ বাংলায় লিখে লিফলেট বিলি করা উচিত। তাহলে আর বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে না। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক ফায়দা হবে না শাসক দলের'।      

Advertisement

১১ এপ্রিল হিংসা কীভাবে শুরু? (Murshidabad Violence Ground Report)

১১ই এপ্রিল শুক্রবার নমাজের পর ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেন মুসলিমরা। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে সুতির মোড় এবং সাজুর মোড়ে চলে অবরোধ। তা হিংসাত্মক হতে শুরু করে। লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। চার রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। সেই গুলি ২১ বছর বয়সী এজাজ আহমেদের ঊরুতে গিয়ে লাগে বলে অভিযোগ। তাঁকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে বহরমপুরে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি এজাজকে। পরিবারের দাবি, এজাজ প্রতিবাদে যাননি। তিনি মামাবাড়ি থেকে ফিরছিলেন। 

মুর্শিদাবাদ হিংসায় জ্বলছে গাড়ি।

সুতি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ধুলিয়ান বাজারেও ছড়িয়ে পড়ে হিংসা। ওয়াকফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে কমবয়সী ছেলেরা ছিল। স্থানীয়রা জানালেন, সকলের বয়স ১৫ থেকে ২৫-এর মধ্যেই। তাঁদের ফোনে তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাথর ছুড়ে ভাঙচুর চালাচ্ছে এই যুবকরা। বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান ও বাড়িতে পাথর ছোড়া হচ্ছিল। বেশ কয়েকটি দোকানে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের বেশিরভাগ লোকের মুখ ঢাকা ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, এই ভাঙচুরকারীরা কেউ এলাকার লোক নয়। তবে প্রশ্ন একটা উঠছে, ধ্বংসলীলা চালানোর সময় তারা কীভাবে বুঝল কোন দোকানটা কোন সম্প্রদায়ের। এর পিছনে একটা যুক্তি হল, দোকানের নাম দেখে তারা বুঝেছে। যেমন একটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সেটিতে লেখা ছিল,'রাধে রাধে'। যদিও মালিক এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ।       

স্থানীয় হিন্দুরা জানাচ্ছেন, দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর, হামলা চালালেও পুলিশের দেখা মেলেনি। কিন্তু ৩-৪ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চললেও কেন পুলিশ আসতে পারেনি? জাতীয় সড়কে যে বিক্ষোভ চলছিল, সেখানেই পুলিশ আটকে পড়েছিল। দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল ধুলিয়ান বাজার।  

১২ এপ্রিল, শনিবার ফের হিংসা (Murshidabad Violence Ground Report)

ধুলিয়ান বাজারে শুক্রবার তাণ্ডব চলার পরও পুলিশের হুঁশ ফেরেনি। এখানে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথাও প্রণিধানযোগ্য। ১২ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে ধুলিয়ান বাজার থেকে ভিতরে বেতবোনা, জাফরাবাদ, ডিগরিতে শুরু হয় হিংসা। বেছে বেছে হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর চলে মন্দিরেও। বেতবোনার এক বাসিন্দার দাবি, তাঁদের (হিন্দুদের) দিয়েই 'আল্লাহু হু আকবর' বলিয়ে মন্দির ভাঙা হয়েছে। ডিগরিতে একটা বাড়িও আস্ত থাকেনি। সেখানে বাইক, সাইকেল, গাড়ি, দোকান এবং টোটো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও ভিতরে জাফরাবাদেও চলে হামলা। বাড়ি থেকে টেনে বের করে হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে কোপায় দুষ্কৃতীরা। মারা যান বাবা-ছেলে। পরিবারের দাবি, দুষ্কৃতীদের মুখ ছিল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা।        

জ্বালানো হয়েছে বাস।

  মসজিদ ভাঙার গুজব (Murshidabad Violence Ground Report)

পাশেই গোবিন্দপুরের বাসিন্দা মহম্মদ ইলিয়াস বলেন,'ওই দিন সকালে রটানো হয়েছিল মসজিদ ভেঙে দিয়েছে হিন্দুরা। সেই গুজব থেকেই ছড়ায় হিংসা'।   

একের পর এক গ্রামে যখন তাণ্ডব চলছিল তখন পুলিশ কোথায় ছিল? স্থানীয়রা বলছেন,'বারবার ফোন করা সত্ত্বেও পুলিশ আসেনি'। আর পুলিশ কখন এল? দুপুর ২টোর পর আসে পুলিশ। বিএসএফ-এর সাহায্য চায় রাজ্য। ১২ এপ্রিল রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে হিন্দু পরিবারগুলি এলাকা ছাড়ে। তাঁদের অনেকেই নদী পেরিয়ে আশ্রয় নেয় মালদার পারলালপুর স্কুলে। এখানে বিজেপির উদ্যোগেই শুরু হয় ত্রাণ শিবির। কেউ কেউ পাকুরে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। অনেকে ঠাঁই নেন অন্যত্র। 

যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁরাও ভয়ে রয়েছেন। এই বুঝি আবার হামলা চলে! ভীত-সন্ত্রস্ত হিন্দুরা চাইছেন, সারাবছরই এখানে বিএসএফ ক্যাম্প থাকুক। আশঙ্কা, বাহিনী চলে গেলেই আবার হামলা হতে পারে! ভরসা দিতে পারছে না পুলিশ। 

Advertisement

Read more!
Advertisement
Advertisement