রবিবার সকালে কুলতলির মৈপীঠের গঙ্গার ঘাট এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামবাসীরা। দাবি করা হয়, একসঙ্গে দুটি বাঘ এসেছে সেখানে। সেই খবর পেয়ে সেখানে যান বনর্মীরা। পায়ের ছাপ পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। পরে বনকর্মীরা দাবি করেন, আপাতত লোকালয় লাগোয়া বনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই বাঘ। অবশেষে খাঁচাবন্দি করা হল মৈপীঠের বাঘকে।
রবিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির কিশোরীমোহনপুর এলাকায় বাঘ ঢোকার খবর পেয়ে নজরদারি শুরু করে বন দফতর। জঙ্গলের চার দিক জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। ফলে বাঘের গতিবিধি নির্দিষ্ট একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ঘেরা জায়গার মধ্যে পাতা হয় খাঁচা। টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি ছাগলকে। খাবারের টানে রবিবার রাতেই খাঁচায় ধরা দেয় বাঘ।
ছাগলকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে খাঁচা পেতেছিলেন বনকর্মীরা। সেই টোপেই দেয় কাজ। রবিবার গভীর রাতে বনদফতরের খাঁচায় ধরা দেয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাঘবন্দি হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন মৈপীঠের বাসিন্দারা। এই নিয়ে এক সপ্তাহে তিনবার লোকালয়ে বাঘ চলে আসার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই রাতের ঘুম কেড়েছিল তাঁদের।
উল্লেখ্য, রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির মৈপীঠ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রথম বাঘের পায়ের ছাপটি লক্ষ্য করেন। তারপর খবর দেওয়া হয় বনদফতরকে। বনদফতরের কর্মীরা এসে বাঘের পায়ের ছাপটি দেখেন। বাঘের পায়ের ছাপটি লক্ষ্য করে বনদফতরের কর্মীরা মনে করছেন, নতুন করে এলাকায় আবার বাঘ ঢুকেছে। তবে বাঘ দেখা যায়নি। স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করেন, দুটি বাঘ ঢুকে পড়েছে। তবে বাঘের অস্তিত্ব না জানায় কটি বাঘ, সে বিষয়ে বনদফতরের তরফে নিশ্চিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। জাল দিয়ে প্রায় গোটা গ্রাম ঘিরে ফেরা হয়। বনদফতরের তরফে খাঁচাও পাতা হয়। তাতেই দেয় কাজ। গভীর রাতে খাঁচাবন্দি করা হয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে।
মৈপীঠে বাঘের আতঙ্ক নতুন নয়। গত এক সপ্তাহে এ নিয়ে তিন বার সুন্দরবনের আজমলমারির জঙ্গল থেকে বাঘ মৈপীঠ কোস্টাল থানা এলাকায় ঢুকে পড়ল। দিন কয়েক আগেই বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্ত পল্লি ও কিশোরীমোহনপুর এলাকায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীরা। পরে বাঘকে আজমলমারির জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হন বনকর্মীরা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের পাশে মাকড়ি নদীর পারে ম্যানগ্রোভের ঝোপে ফের দেখা যায় বাঘের পায়ের ছাপ। স্থানীয়দের একাংশের দাবি মোতাবেক, রাতে আবার আজমলমারির জঙ্গল থেকে নদী পেরিয়ে গ্রাম লাগোয়া বাদাবনে ঢুকে পড়েছে বাঘ। পরে তাকেও জঙ্গলে পাঠান বনকর্মীরা। বার বার মৈপীঠে বাঘ ঢুকে পড়ায় উঠছে প্রশ্ন। একটি বাঘই বার বার এলাকায় হানা দিচ্ছে, না কি অন্য বাঘ, তা নিয়েও ধোঁয়াশায় বনকর্মীরা। কীভাবে বাঘ বারবার লোকালয়ে আসছে, সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে স্থানীয়দের। অনেকেই মনে করছেন উত্তর বৈকুণ্ঠপুরের বাঘ জঙ্গলে গিয়ে আবার বেরিয়ে নদী পার হয়ে মৈপীঠ বৈকন্ঠপুর ফিরেছে।