সম্প্রতি ভারতে ধরা পড়েছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের ৮ সদস্য। এই ধৃতদের মধ্যে দুজনকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে তখনি ফের বাংলাতেই ধরা পড়ল জঙ্গি সন্দেহে আরও এক ব্যক্তি। এবার খোদ কাশ্মীরের যোগ। শাল ব্যবসায়ী হয়ে এসে বাংলায় নাশকতার ছক বুনছিল জাভেদ মুন্সি। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যে গ্রেফতার কর হয়েছে জাভেদ মুন্সিকে।
প্রশ্ন উঠছে, কী করতে কাশ্মীর থেকে কলকাতায় এসেছিল জাভেদ মুন্সি? পুলিশ সূত্রে খবর, কাশ্মীরের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-উল-মুজাহিদিনের সদস্য ওই ব্যক্তি। ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জাভেদকে। জানান যাচ্ছে, কাশ্মীরের শ্রীনগরে তানপুরার বাসিন্দা জাভেদ। ক্যানিংয়ে নিজের শালার বাড়িতে এসেছিলেন জাভেদ। তাঁর শ্যালক পেশায় শাল ব্যবসায়ী। শনিবার রাতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
কেন জাভেদমুন্সি ক্যানিংয়ে এসেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন সূত্রে তাঁকে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি কলকাতা পুলিশ। ক্যানিং-এর বাসিন্দা জাভেদের আত্মীয় বলছেন, ‘‘জাভেদ আমার ননদের স্বামী হন। যে দিন তিনি এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে, সে দিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ধৃতের জঙ্গিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমার ননদের সঙ্গে ২৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছে জাভেদের। ও কী করে, কিছুই জানি না। পুলিশও জিজ্ঞেস করেছে একই প্রশ্ন। আমরা জানিয়েছি যে জাভেদ আমাদের আত্মীয়। এখানে আসতে চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি, এসো। এর থেকে বেশি কিছু জানি না।’’
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, বারুইপুর জেলা পুলিশ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিস যৌথ অভিযানে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে জাভেদ মুন্সিকে । ধৃতকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রান্সজিটে রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রশ্ন উঠছে ক্যানিংয়ে নিছক বেড়াতে এসেছিলেন জাভেদ নাকি তার অন্য কোনও মতলব ছিল? তবে কি ক্যানিংয়ে স্লিপার সেল তৈরির চেষ্টা চলছিল? সূত্রের খবর ওই জঙ্গি বেশ কিছুদিন ধরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এরপর সে ক্য়ানিংয়ের ওই আত্মীয়ের বাড়িতে ঘাপটি মেরেছিল। তবে সে কেন এভাবে ক্যানিংয়ে এসেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জানা যাচ্ছে, তেহেরিক উল মুজাহিদিনের সদস্য জাভেদ নাকি আইইডি তৈরিতেও দক্ষ।
প্রশ্ন উঠছে জাভেদের ছকটা কী ছিল? তবে কি ওখানে বসে সে অন্য কোনও পরিকল্পনা করছিল? কাশ্মীর পুলিশ তার গতিবিধির উপর নজর রাখছিল। কাশ্মীর পুলিশের ওয়ান্টেড তালিকায় নাম ছিল জাভেদের।
এরপর তারা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর তারা ক্যানিংয়ের ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন ওই জঙ্গিকে। একটি সূত্রের খবর, এর আগেও সে ক্য়ানিংয়ে এসেছিল। কাশ্মীরে তার নাকি ওষুধের কারবার। তবে সেই পেশার আড়ালে কি গড়ে তুলছিল জঙ্গি নেটওয়ার্ক? বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তানেও যাতায়াত ছিল তার। ২০২২ সালেও একবার কলকাতায় এসেছিল জাভেদ। সেবার সে ১০-১২ দিন ধরে ক্যানিংয়ে ছিল। সেবার কলকাতার ভিক্টোরিয়াতেও ঘুরতে গিয়েছিল জাভেদ। আর এবার একেবারে দিল্লি হয়ে ক্যানিং। তারপরের গন্তব্য কি বাংলাদেশ?
সূত্র বলছে, তেহরিক-উল-মুজাহিদিন ট্রেনিং নিতে পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল জাভেদকেও। সেখানেই অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেয় জাভেদ। প্রথম ধাপ পেরনোর পর শুরু হয় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) পরিচালনা সংক্ৰান্ত ট্রেনিং। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরেই একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপে নেমে পড়ে জাভেদ। এসটিএফ সূত্রে খবর, ২০১১ সালে আহল-ই-হাদিসের নেতা শওকত শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল সে। সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে একাধিকবার হাজতেও কাটাতে হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম ওঠে জাভেদের। জেরায় জাভেদ স্বীকার করেছে জাল পাকিস্তানি পাসপোর্ট চক্রের নির্দেশে একাধিকবার বাংলাদেশ, নেপালেও যেতে হয়েছে জাভেদকে। এ বার লস্কর-ই-তৈবার সদস্যেদের নির্দেশে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য ক্যানিং-এ এসেছিল জাভেদ। সম্প্রতি কী কোনও জঙ্গি কার্যকলাপ করার প্ল্যান ছকা হয়েছিল? কী কারণে বাংলাদেশ যেতে চলছিল জাভেদ? ঘেঁটে দেখেছেন তদন্তকারীরা। সেইসঙ্গে বাংলা থেকে পরপর ৩ জঙ্গি গ্রেফতার হওয়া এই প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে, তবে কি এবার জঙ্গিরা বাংলাকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করছে?