সকাল থেকেই মুখ ভার কলকাতার আকাশের। সঙ্গে টিপ টিপ বৃষ্টিও চলছে। যেকোনও সময় শুরু হয়ে যেতে পারে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিও। হাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ৭টি জেলায় ও উত্তরের ৫টি জেলায়। সেইসঙ্গে প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে নিম্নচাপ। এর প্রভাব পড়বে বাংলাতেও। নিম্নচাপের বৃষ্টি কতদিন চলবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই পূর্বাভাস।
নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি
আবহাওয়ার রিপোর্ট বলছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হচ্ছে নিম্নচাপ। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে জন্ম হয়েছে ঘূর্ণাবর্তের। তা থেকে আজই নিম্নচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেই নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়াতে পারে। এই নিম্নচাপের প্রভাবেই বৃষ্টির দাপট বাড়বে বাংলায়। ।উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ, প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কয়েকটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ৭টি জেলায় ও উত্তরের ৫টি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা ও হাওড়ায়। নীচু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। পাহাড়ি এলাকায় ধস নামতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
কোন জেলার কী পরিস্থিতি?
আগামিকাল থেকেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উপকূলের জেলাগুলিতে। বুধবার থেকে শুরু করে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই জেলাগুলি ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপের জেরে। আর এই নিম্নচাপের হাত ধরেই বঙ্গে এবার সময়ের আগে ঢুকে পড়তে পারে বর্ষাকাল। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় আজ বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও কোনও জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রতিটি জেলার একটি বা দুটি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝড় উঠবে। বুধবারও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সব জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে শুধু সেটাই নয়, সেদিন চারটি জেলা- উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি বা দুটি জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার আবার দক্ষিণবঙ্গের ১০টি জেলা- উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমানের একটি বা দুটি অংশে ভারী বৃষ্টি হবে। আর বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য সব জেলায় ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝড় উঠবে। সেজন্য প্রতিটি জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হুগলির একটি বা দুটি অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ওই জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে সেদিন ভারী বৃষ্টি হবে। তাই সেখানে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার দক্ষিণবঙ্গের দুটি জেলা- বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের একটি বা দুটি অংশে ভারী বৃষ্টি হবে। ওই দুটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান এবং নদিয়ার একটি বা দুটি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি
আজ উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলা মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি বা দুটি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। ওই তিনটি জেলায় ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বাকি পাঁচটি জেলা- দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের একটি বা দুটি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে এবং শুক্রবার দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার এবং শনিবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের একটি বা দুটি অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ওই জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবার জামাইষষ্ঠীর দিন উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা- দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের একটি বা দুটি অংশে ভারী বৃষ্টি হবে। ওই পাঁচটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তাছাড়া উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদার অধিকাংশ জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা
নিম্নচাপ তৈরি হলে সমুদ্র উত্তাল হবে। প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই আগাম সতর্কতা হিসেবে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বুধবার থেকে সমুদ্রের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। সেই কারণেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
বর্ষা ঢুকছে কবে?
এই বছর সময়ের আগেই দেশের একাধিক রাজ্যে ঢুকেছে বর্ষা। কেরল, মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই বর্ষা ঢুকে পড়েছে। নিম্নচাপের জেরে বাংলাতেও বর্ষার আগমন একটু আগেই হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকে যেতে পারে বর্ষা। উত্তরবঙ্গ দিয়ে ঢুকে দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করবে বর্ষা। এই মুহূর্তে বর্ষার সব রকম অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই প্রাক বর্ষার বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কলকাতার আবহাওয়া
ইতিমধ্যেই কলকাতায় প্রাক-বর্ষার ভরপুর আমেজ মিলতে শুরু করেছে । আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। মঙ্গলবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১.৪ ডিগ্রি কম। সোমবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৩.৮ডিগ্রি কম।