বাংলা ভাষায় কথা বললেই ভিনরাজ্যে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। বোলপুরের জনসভা থেকে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি দাবি করেন, যে কোনও মানুষের যে কোনও ভাষায় কথা বলার অধিকার রয়েছে। অথচ সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
মমতার কথায়, 'কেউ কেউ বলছে ওরা রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা আসবে কোথা থেকে? বলে দিচ্ছে বাংলাদেশি। বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? তোমার ভাষা কী? তুমি যে ভাষায় কথাটা কইতাসো সেটা কী? বাংলাদেশের ভাষা আমিও তো বলতে পারি। তাহলে কি আমিও বাংলাদেশি? যেখানে যাই সেখানে সেই ভাষায় কথা বলি। কিন্তু আমাদের ভাষার মানুষের ভোটার লিস্ট থেকে নাম কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত রুখছি, রুখব। সেজন্য সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে। চক্রান্তকারীদের পিছু হটিয়ে ছাড়ব। একজনেরও ঠিকানা যদি কেড়ে নেয়, তাহলে তাদেরও ঠিকানা থাকবে না। কমিশন নিয়ম করছে বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র লাগবে। যারা এসব চাইছে তাদের জিজ্ঞসা করব, তোমাদের আছে তো?'
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলা ভাষীদের বিভিন্ন রাজ্যে হেনস্থা করা হচ্ছে। সেজন্য একজোট হয়ে প্রতিবাদেরও আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ' আমাদের বাংলা ভাষা আমাদের অস্মিতা। সম্পদ-সংস্কৃতি, জাতীর মেরুদণ্ড এই ভাষা। কারও ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। বাংলা ভাষা বলার জন্য অত্যাচার করি। আমি সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানাব, তারা যেন ভাষাকে বঞ্চনার বিরোধিতা করুন।'
এদিন বোলপুরে প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা অভিযোগ করেন, দিল্লি, গুজরাত, হরিয়ানা, মুম্বইয়ের মতো রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা অমেকে ফিরে আসছেন। তাঁদের উপর আক্রমণ হয়েছে সেই সব জায়গায়। সেজন্য ফেরত আসার সিন্ধান্ত নিচ্ছেন অনেকে। জনসভা থেকও পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে আসার পরামর্শ দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
তিনি বলেন, 'বাংলার বাইরে অত্যাচারিত হচ্ছেন যাঁরা আছেন । এখানে পুলিশের হেল্পলাইন আছে। আপনাদের বিস্তারিত পাঠিয়ে দেব। নেতারা পাশে থাকবেন। কোভিডের সময় তো এনেছিলাম আপনাদের। এই নিয়ে আজই মিটিং করেছি। স্কিম করা হয়েছে। যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে থাকবেন না। রাজস্থান, দিল্লি, অসম, গুজরাত, হরিয়ানায় থাকার দরকার নেই। ওখানকার নেতারা কথা বলতে গেলে দাঁত ভেঙে যায়। ওদের কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি, ২২ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকরা এলে তাঁদের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেওয়া হবে। ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে রেশনের। এছাড়াও শ্রমিকের বাড়ি না থাকলে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।মন্ত্রী মলয় ঘটককে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর নির্দেশও দেন তিনি।