গত দু'দিন ধরে জলযন্ত্রণায় নাজেহাল হয়েছেন কলকাতাবাসী। আর তার মধ্যেই আজ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে নিম্নচাপ। ফলে নতুন করে বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বঙ্গে। ভাসতে পরে পুজোর দিনগুলিও। আগামী কয়েকদিন কেমন থাকবে বঙ্গের প্রতিটি জেলার আবহাওয়া? চলুন জেনে নেওয়া যাক আপডেট।
নতুন করে নিম্নচাপ
আজ অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর উত্তর বঙ্গোপসাগরে নতুন করে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। পশ্চিম দিকে সরতে সরতে এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে সক্রিয় থাকবে নিম্নচাপ। তা ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। এর প্রভাবে শনিবার অর্থআৎ পঞ্চমীতে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও হতে পারে ভারী বর্ষণ। ইতিমধ্যেই শনিবার ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায়। এই পরিস্থিতিতে ২৮ তারিখ পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। জারি হয়েছে লাল সতর্কতা।
এখানেই শেষ নয়
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছএ, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মধ্য মিয়ানমারের উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। ওই ঘূর্ণাবর্তটি উত্তর–পশ্চিম দিকে মুখ ঘুরিয়ে ভারতের দিকে এগোতে শুরু করে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘূর্ণাবর্তটি প্রথমে শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপ এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও কিছুটা শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপের রূপ ধারণ করবে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, গভীর নিম্নচাপটি ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানার দিকে এগিয়ে যাবে। তবে, বাংলার উপকূলবর্তী এলাকার খুব কাছ দিয়ে সেটা যাবে বলে শনিবার দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এরপর আগামী মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বর, দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সমুদ্রের কোন জায়গায় সেটি তৈরি হতে চলেছে এবং তার সম্ভাব্য অভিমুখ কী হতে পারে— সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি হাওয়া অফিস। তবে ঘূর্ণাবর্ত শক্তিশালী হলে নবমীর রাত থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া
আজও দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। শুক্রবারও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে হাওয়া অফিস। শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। এ ছাড়া, বাকি জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। রবিবার অর্থাৎ অষ্টমীর দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। বাকি জেলায় হাওয়ার বেগ থাকবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার, অর্থাৎ সপ্তমী ও অষ্টমীতে দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। হাওয়া অফিস বলছে, আগামী পাঁচ থেকে সাত দিন বজ্রবিদ্যুৎ বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণ বঙ্গের সব জেলাতেই। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি
উত্তরবঙ্গে আজ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং উত্তর দিনাজপুরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার সেই সতর্কতা রয়েছে কোচবিহারেও। শনিবার উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। তবে রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে কোথাও আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা নেই। তবে দু’-একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কলকাতার আবহাওয়া
আজ বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে শহরে। হাওয়া অফিস বলছে, কলকাতায় আগামী দু'দিন রোদের দেখা মিললেও মাঝে মাঝে মেঘলা আকাশ থাকবে এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার শহরে মেঘলা আকাশ এবং কয়েক পশলা বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।