উত্তরবঙ্গের দুই পরিচিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (GNLF) ও কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি (KPP)-র স্বীকৃতি বাতিল করে দিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।
কমিশনের বক্তব্য, গত ছয় বছর ধরে কোনও নির্বাচনে অংশ নেয়নি এই দুই দল। এমনকী সময়মতো আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্রও জমা পড়েনি। তাই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও, দলদুটিকে ‘স্বীকৃত রাজনৈতিক দল’ হিসেবে আর গণ্য করা হবে না।
এখনও রয়েছে আবেদন করার সুযোগ
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে দলগুলি যদি ব্যাখ্যা দিয়ে আবেদন করে, তবে স্বীকৃতি ফিরিয়ে পাওয়ার সুযোগ থাকছে। কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অধীর রায় বলেন, “এর আগে আমাদের শোকজ করা হয়েছিল, আমরা তার জবাব দিয়েছি। স্বীকৃতি বাতিলের খবর এখনও জানি না।”
তিনি আরও জানান, অতুল রায় পরবর্তী সময়ে দল বিভক্ত হয়ে যায় একাধিক শিবিরে। তাঁর দাবি, “আমি ২০২৩ থেকে দলের দায়িত্বে আছি। বিভিন্ন নির্বাচনে লড়ার চেষ্টা করেছি। এবার কমিশনের কাছে আবেদন করব স্বীকৃতি ফেরানোর জন্য। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও লড়ব।”
পাহাড়ে একদা একচ্ছত্র, আজ শূন্য হাত জিএনএলএফ
দার্জিলিং পাহাড়ে এক সময় যে দলের কথাই শেষ কথা ছিল, সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (GNLF), সেই দলের আজকের দশা, স্বীকৃতিই নেই।
ঘিসিংয়ের জীবদ্দশায় পাহাড়ে নির্বাচন বয়কট হোক বা সমর্থনের রাজনীতি—সবকিছুর মধ্যেই জিএনএলএফ নিজের প্রতীকে লড়েছে, বিধায়কও পাঠিয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যু পর থেকে দলের কার্যকলাপ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায়।
বর্তমান মহাসচিব ও দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা জানালেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবার আবেদন করব, যাতে স্বীকৃত দলের মর্যাদা ফেরানো হয়।”
সুবাস ঘিসিংয়ের মৃত্যুর পরে GNLF কার্যত বিজেপির ছায়াতেই থেকে গিয়েছে। সব নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী না তুলে বিজেপিকে সমর্থন করেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অন্য দলকে সমর্থনের পথ, এতেই কমিশনের নজরে পড়ে গেল জিএনএলএফ।
মোট ১২টি দলের স্বীকৃতি বাতিল
উল্লেখ্য, গত ১১ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের ১২টি দলকে শোকজ করে জানায়, ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত কোনও নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। তথ্য জমা না পড়ার অভিযোগও তোলে কমিশন। এক মাস সময় দিয়ে জবাব চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত।
এক সময় যারা উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক চালচিত্রে প্রভাব ফেলত, আজ তাদের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে। নির্বাচনে অংশ না নিলে আইনি ও সাংগঠনিক দিক থেকে স্বীকৃতি হারানোর ঝুঁকি কতটা বড় হতে পারে, জিএনএলএফ ও কেপিপির ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তবে এখন দেখার, কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই দলগুলি নতুন করে কী পদক্ষেপ নেয়, আর আদৌ তারা নিজেদের স্বীকৃতি ফেরাতে পারে কি না।