আর মাত্র কয়েকটা দিন। ২০২০ কে বিদায় জানিয়ে ২০২১কে স্বাগত জানাতে তৈরি সবাই। ২০২০ সালটা সবার জন্য বলা যায় খুব একটা ভালো যায়নি। করোনার ছোবল থেকে আমফানের তাণ্ডব সব কিছুর সাক্ষী বাংলা। সেই সঙ্গে লকডাউনের এফেক্ট তো রয়েছেই। এক নজরে দেখে নিন ২০২০ সালে ঘটে চলা বাংলার বুকে ৫টি বড় ঘটনা।
আমফান
করোনার প্রকোপ গোটা দেশে তখন ছোবল মারতে শুরু করেছে। সেই সময়ে বাংলায় আছড়ে পড়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফান। মারাত্মক এই ঝড়ে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণবঙ্গ। মে মাসের ২৯ তারিখের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র বাংলাতে মৃতের সংখ্যা ৮৬। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষ৷ প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল বলে খবর৷ কার্যত বেশ কয়েকদিন বিদ্যুৎহীন ছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রচুর। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বাংলাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে তারপর বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল। ক্ষতির মুখে পড়েছিল সুন্দরবন এলাকাও।
লকডাউন
২০২০ সালে অধিকাংশের বেশিরভাগ সময়টা কেটেছে কার্যত গৃহবন্দি হিসাবে। নেপথ্যে করোনা। ডিসেম্বরে এসেও করোনার হাত থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি। বাংলাতে করোনার প্রকোপে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে লকডাউনে কার্যত বাংলার জনজীবন থমকে গিয়েছে। বন্ধ হয়েছিল রেল পরিষেবা। এমন ঘটনা রাজ্যবাসীর সঙ্গে আগে হয়নি বলাই চলে। সেইসঙ্গে প্রবল সমস্যায় পড়েছিলেন রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা। লকডাউনে কোনওরকমে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। পরে তাদের জন্য চালু হয় স্পেশাল ট্রেন। সাহায্যে এগিয়ে আসেন অনেকে।
দুর্গাপুজোর রায়
দুর্গাপুজোয় গৃহবন্দি বাঙালি! এক বছর আগে পর্যন্ত এমন কথা ভাবাও যেত না। কিন্তু চলতি বছরে করোনার দাপটে যেন সবকিছু উলোটপালট হয়ে গিয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে এবছর দুর্গামণ্ডপের প্রবেশের উপর বেশ কিছু কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। দুর্গাপুজোয় করোনাবিধি সংক্রান্ত এক মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, করোনা বিধি মেনে একসঙ্গে বড় পুজো মণ্ডপে সর্বোচ্চ ৪৫ জন থাকতে পারবেন। রাজ্যের সব পুজো মণ্ডপ কন্টেইনমেন্ট জোন। মণ্ডপ দর্শনার্থী শূন্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে নো এন্ট্রি লিখতে হবে মণ্ডপের সামনে। রাখতে বাফার জোনও। করোনার মধ্যে মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এই রায় দেওয়া হয়েছিল।
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো
১৩ ফেব্রুয়ারি অবশেষ চাকা গড়ায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। প্রথম ধাপে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত যাত্রা শুরু করে। প্রথমে সেক্টর ফাইভ থেকে করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল হয়ে ট্রেন পৌঁছাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে।পরে চালু হয় ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনও। একই সঙ্গে কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে প্রায় ২৫ বছর পরে নতুন কোনও ভূগর্ভস্থ স্টেশন চালু হয়। সেইসঙ্গে প্রতিটি স্টেশন অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে রেকগুলিও উন্নতমানের। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছে একাধিক ব্যবস্থা।
পরীক্ষার্থী পাশ
করোনার জেরে এবছর বন্ধ রয়েছে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। কিন্তু তার ফলে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। একাদশ শ্রেণির সকল পড়ুয়াকে পাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ুয়ারা একটি করে সেমেস্টার এগিয়ে যাবে। শুধু মাত্র ফাইনাল সেমেস্টারের পরীক্ষা হবে। তার আগে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল পড়ুয়াকেই পাশে সিদ্ধান্ত নিয়েছল রাজ্য সরকার।