তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ইউসুফ পাঠানের আদিনা মসজিদ পরিদর্শনের ছবি ঘিরে ফের বিতর্ক দানা বাঁধল। মালদা সফরে গিয়ে পাঠান সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐতিহাসিক আদিনা মসজিদের ছবি পোস্ট করেন এবং একে ১৪শ শতকের ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন বলে উল্লেখ করেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ব্যবহারকারী দাবি করেন, আদিনা মসজিদ আসলে 'আদিনাথ মন্দির'-এর উপর গড়ে তোলা হয়েছিল।
মন্তব্যকারীরা জানান, মসজিদের নির্মাণে হিন্দু স্থাপত্য ও দেবতার নিদর্শন এখনও দৃশ্যমান। কেউ কেউ শিবলিঙ্গ ও গণেশের ভাস্কর্য থাকার প্রমাণও তুলে ধরেন। ইতিহাসবিদদের একাংশ স্বীকার করেন, আদিনা মসজিদের নির্মাণে পাল-সেন যুগের মন্দিরের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব দফতরের অধীনে সংরক্ষিত এবং সেখানে ধর্মীয় কার্যকলাপ আইনত নিষিদ্ধ।
মালদার পাণ্ডুয়া শহরে অবস্থিত আদিনা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ১৩৭৩-৭৫ সালের মধ্যে, সুলতান সিকন্দর শাহের শাসনকালে। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল তাঁর সামরিক বিজয়ের স্মারক। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ও স্থাপত্য বিশ্লেষণ বলছে, মসজিদ তৈরির সময় পাল-সেন যুগের বহু মন্দির ধ্বংস করে তাদের পাথর, স্তম্ভ, অলঙ্করণ ব্যবহার করা হয়েছিল।
মসজিদের দেওয়াল ও খিলানে দেখা যায় হিন্দু ধর্মীয় মোটিফ—ফুল, ঘণ্টা, মালা, কৈলাস চিহ্ন, মুখমণ্ডল। যা তৎকালীন হিন্দু মন্দির স্থাপত্যে ব্যবহৃত হত। গবেষকদের একাংশ মনে করেন, এই স্থানে আগে একটি শিবমন্দির ছিল, যার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা ছিলেন ‘আদিনাথ’— অর্থাৎ প্রথম দেব। সেখান থেকেই ‘আদিনা’ নামের উৎপত্তি বলেও অনেকের ধারণা। এই দাবিগুলি যদিও প্রমাণসাপেক্ষ, তবুও ইতিহাস, ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণে আদিনা মসজিদ আজও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।