'রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘাত বাড়বে। দেশীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আদর্শগত লক্ষ্যচ্যুতি প্রকট হবে।' নতুন পঞ্জিকায় এমনটাই বলা হয়েছে। প্রতিবছরই নববর্ষের আগে নতুন পঞ্জিকা প্রকাশিত হয়। তাতে সবকিছুর সঙ্গে থাকে রাষ্ট্রগত বর্ষফল। ১৪৩১ সালের রাষ্ট্রগত বর্ষফলে পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, 'রাজ্যের শাসকদল এবং প্রধান বিরোধীদলের উপদলীয় শত্রুতা অন্যদলগুলিকে ভাঙাতে সহযোগী হয়ে উঠবে। ধর্ম, নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি নতুন করে রেখাপাত করায় শিক্ষা, শিল্প, কৃষি নিয়ে উচ্চবাচ্য বন্ধ রাখতে সরকার বাধ্য থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের শরীরের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।'
দেশের বিষয়ে পঞ্জিকা বলছে, 'বিরোধী ঐক্য দৃঢ়তা না পাওয়ায় কেন্দ্রের প্রধান শাসকদলের সুকৌশলে পুনরায় ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। মন্দির রাজনীতির নিরিখে বিরোধী দলগুলির অস্পষ্টতা সংশয়ের কারণ হয়ে উঠবে। শাসকদলের উপদলীয় সংঘাত বৃদ্ধির সম্ভাবনা। যুক্তরাষ্ট্রিয় কাঠামোয় একনায়কত্ব বিস্তার সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে।'
এছাড়াও নতুন বছরের পঞ্জিকায় রীতিমতো অসম, ত্রিপুরা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চিন, আমেরিকা, রাশিয়া, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, জাপানের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
শোভাবাজারের ৩১ নম্বর অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটে বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকার (Almanac) অফিস। এখন প্রকাশনা ব্যবসার বেশিরভাগটাই সামলান মোহনচাঁদ শীল। তিনি বেণীমাধব শীলের বড় ছেলে। দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর ভাই অভিজিৎও।
দাদু পূর্ণচন্দ্র শীল ১৯৩০ সাল নাগাদ ছাপানো শুরু করেছিলেন পূর্ণচন্দ্র শীলের ডায়েরেক্টরি ফুল পঞ্জিকা। যা এখনও ছাপা হয়। বেণীমাধব তখন স্কটিশচার্চ কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। পূর্ণচন্দ্রের ইচ্ছাতেই বেণীমাধব স্নাতক হওয়ার পর বাবার প্রকাশনা ব্যবসায় যুক্ত হন। পঞ্জিকায় যে ছবিটি দেখা যায়, তখন বেণীমাধবের ২১ বছর বয়স। পূর্ণচন্দ্রেরই ইচ্ছা হয়েছিল ছেলের ছবি দিয়ে পঞ্জিকা ছাপানোর। মহাত্মা গান্ধী রোডের অক্ষয় লাইব্রেরিও তাঁদেরই। মূলত ধর্মগ্রন্থ ছাপা হয় সেখানে।
পূর্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে প্রকাশনা সংস্থার মালিকানা ভাগ হয়ে যায়। বড় ছেলে বেণীমাধব নিজের নামে পঞ্জিকা ছাপানো শুরু করেন। নাম দেন, ‘বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা। দেওয়া হয় তাঁর ছবি। তখন ইংরেজ আমল। বেশিরভাগ ব্রিটিশ সংস্থার নাম হত কর্ণধারের নাম অনুযায়ী। তখন সাহেবরাও তাঁর নিজের নামে পঞ্জিকার নামকরণের প্রশংসা করেছিলেন। যা প্রায় ৭৫ বছর ধরে ছাপানো হচ্ছে। এবং বিক্রি সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি পঞ্জিকায় লেখা থাকে ‘এখন থেকে পঞ্জিকা কিনিবার সময় বেণীমাধব নামের পরে শীল পদবী দেখিয়া কিনুন।’ এবং বেণীমাধবের ছবির পাশে একটি তির চিহ্ন দিয়ে লেখা থাকে, ‘বেণীমাধব শীলের এই ছবিই দেখিয়া কিনুন।’