চিকিৎসা করাতে রবিবার রাতে ভারতে এলেন বাংলাদেশের সনাতনী জোটের মুখপাত্র ও ইস্কন সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরে ছেলের বাড়িতে আছেন তিনি। গত তিন দিন ধরে ওই বাড়িতেই স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন তিনি।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তিনি নিজে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে তাঁর ছেলে কিভাবে ভারতীয় নাগরিক হলেন? এপার বাংলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এর উত্তরের রবীন্দ্র জানান, তার ছেলের যখন ৫ থেকে ১০ বছর বয়স, তখন উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে পাঠিয়ে দেন। এবং সেই থেকেই গত ৩৫/৪০ বছর ধরে ভারতে থাকছেন তাঁর ছেলে। এখানেই প্রাথমিকে পড়াশোনার করার পর উচ্চশিক্ষাও এখানে। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।'
আগামী ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের শুনানি রয়েছে। তার আগে সে দেশে গিয়ে মামলা লড়বেন বলেও এদিন ফের একবার জানিয়েছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। তবে সেক্ষেত্রে তিনি কতটা নিরাপদ, সেই প্রশ্নের উত্তরে সুপ্রিম কোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী জানান, 'আমি নিজেকে নিরাপদ বলে মনে করি এই কারণে যে, আমি কোনও ভুল করিনি বা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কোন অবৈধ কর্মকাণ্ড করিনি। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে।'
তবে দেশে ফিরলে তাঁকে গ্রেফতারের সম্মুখীন হতে হবে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, 'হতে পারে। আমাকে গ্রেফতার করা হলে আমি আইনি পথ নেবো। কোন আইনে আমাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, আমি তা জানতে চাইব।'
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে অনেক আগেই তাঁকে হত্যা করা হতো বলেও মনে করেন বাংলাদেশের এই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি জানান, 'আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি যদি রাজনীতি করতাম তবে সেদিনই আমাকে মেরে ফেলত।'
তাঁর অভিযোগ, 'কেবলমাত্র বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনাকালেই নয়, শেখ হাসিনার সময়কালেও বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ ছিলেন না। এমনকি জেনারেল এরশাদের শাসনকালেও হিন্দুরা নিরাপদ ছিল না। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বাংলাদেশে এরশাদের শাসনকালে ১ হাজার মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরেও বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে, যদিও সেই সংখ্যাটা কম।'
এদিকে ব্যারাকপুরের বাড়িতে রবীন্দ্র ঘোষের অবস্থানের কথা জানতে পেরে গত মঙ্গলবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ। ভারত সেবাশ্রম সংঘের (বেলডাঙা শাখা) প্রধান কার্তিক মহারাজ থেকে শুরু করে ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং, বিজেপি নেতা কৌস্তব বাগচী, প্রিয়াঙ্গু পান্ডে। ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা তাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে মানসিক শক্তি যোগান। তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেন।
সংবাদদাতাঃ দীপক দেবনাথ।