করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন রাজ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। আজ রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। রাজ্যের প্রথম সারির একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এডিটর পদে কর্মরত ছিলেন অঞ্জনবাবু।
ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন অঞ্জনবাবু। করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তবে সেরে ওঠেন। পরে তাঁর শরীরে আরও কিছু জটিলতা ধরা পড়ে। সেকারণে, তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভেন্টিলেশনে ও পরে একমো ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। আজ রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সাংবাদিকমহলে।
সহকর্মীকর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সুধীর চৌধুরী। তাঁর ট্যুইটবার্তা, 'আমার সহকর্মী অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় করোনায় মারা গেলেন। রাজ্যের নির্বাচন কভার করার সময় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় অমিত শাহর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল।'
অঞ্জনবাবুর মৃত্যু নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, 'বাংলার সংবাদমাধ্যম জগতের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তাম। অঞ্জনও। তবে ও আমার থেকে কয়েক বছরের জুনিয়র ছিল। সাংবাদিকতার সূত্রে ওর সঙ্গে আমার সখ্যতা বাড়ে। দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। প্রায় দিন কথা হত আমাদের। নানা বিষয়ে আলাপ-আলাচনা হত। অঞ্জনের সব থেকে বড় গুণ ছিল শিক্ষার অদম্য ইচ্ছে। ও টেলিভিশন মিডিয়াতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। সেই কারণে শেষের দিকে ফের টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দেয়। আর এই চ্যানেল থেকেই ওর উত্থান হয়েছিল। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না ও আমাদের মধ্যে নেই। দিল্লিতেও আমরা কাজ করেছি। ও এমন একজন সাংবাদিক যে কোনওদিন একটা নির্দিষ্ট দলের হয়ে কথা বলছে বলে কেউ দেগে দিতে পারেনি। সাংবাদিকতার কাজ, সম্পাদকীয় নীতি, লেখালেখি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। সেসব আর করতে পারব না, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।'
অপর এক বিশিষ্ট সাংবাদিক কুণাল ঘোষের কথায়, 'আমি এখনও ভাবতে পারছি না অঞ্জনদা নেই। আমরা কোনওদিন একই হাউজে কাজ করিনি ঠিকই। তবে ওকে দাদার মতো ভালোবাসতাম। আমার সঙ্গে সম্মানজনক আন্তরিক সখ্যতার সম্পর্ক ছিল। ৯৬-এর বাজপেয়ী সরকারের পতন যখন হয় তখন আমরা দুজনেই দিল্লিতে। ভিন্ন ভিন্ন হাউজে। সেসময়ের অনেক স্মৃতি আছে। আমাকে অঞ্জনদা তাঁর ভীষণ জনপ্রিয় টকশোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেটা একটা স্মরণীয় দিন। ওর সাথে কত কথা হত। নানা বিষয়ে। বিভিন্ন সাহায্যও পেয়েছি। আমি ভাবতেই পারছি না অঞ্জনদা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।'