ভোজন রসিক বাঙালির পাতে উৎসব- আনন্দে মাছ-মাংস হবে না এমনটা হতেই পারে না। তবে বর্তমান যুগে অনেকেই ডিম খেতে বেশি পছন্দ করেন। সেইসঙ্গে মাছ-মাংসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত বাঙালি এখন ডিমের ওপর বেশি নির্ভর করছে। অনেক পরিবারই শরীরে প্রোটিনের অভাব মেটাতে ভাতের সঙ্গে ডিমের ঝোলের ওপরই নির্ভর করে। তবে ডিম উৎপাদনে এখনও এই রাজ্য স্বনির্ভর নয়। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রী দাবি করেছেন, এবার ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে বাংলা।
ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভরতার পথে বাংলা
বাংলায় বছরে মোট ডিমের চাহিদা ১ হাজার ৪৪০ কোটি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মোট ১ হাজার ২০৩ কোটি ডিম উৎপাদন হচ্ছে। সুতরাং প্রত্যেক বছর বাইরের রাজ্য থেকে ২৩৭ কোটি ডিম আমদানি করতে হচ্ছে। আর এই ডিম আমদানি করতে ভরসা অন্ধ্রপ্রদেশ সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্য। তবে ডিম উৎপাদেন ২০২৩ সালেই স্বনির্ভর হবে রাজ্য। আগামী বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ডিম আমদানির পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।
ডিম উৎপাদন নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য
রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন "ডিমের জন্য অন্য রাজ্যের প্রতি নির্ভরশীলতা তো থাকবে না। পাশাপাশি, রাজ্যের প্রয়োজন মিটিয়ে ডিম রফতানিও করা যাবে।" মন্ত্রী আরও জানান, ডিম ছাড়াও দুধের উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের ইনসেনটিভ বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল দু'টাকা এখন সাত টাকা করা হয়েছে। পশু পালন, মাংস ও ডিম উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি দুধের উৎপাদনও বেড়েছে।
প্রসঙ্গত রাজ্য সরকারের বক্তব্য, গত দশ বছরে ১১৫ শতাংশ ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলায়। এখন এই রাজ্যে যে ডিম উৎপাদিত হয়, তার সিংহভাগই আসে অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে। বছরে ৬৩১ কোটি ডিম আসে সেখান থেকেই। প্রয়োজনের নিরিখে তা ৪৩.৮২ শতাংশ। বাকিটা আসে বেসরকারি ফার্ম এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভ স্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন থেকে। তবে আগামী এক বছরে রাজ্যের চিত্রটা পাল্টে যাবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে ডিমের উৎপাদন বছরে ৭২৭ কোটিতে পৌঁছবে। সরকারি ডিমের উৎপাদনও ৬.২৮ কোটি থেকে বেড়ে হবে ৪৭ কোটি। সংগঠিত ক্ষেত্রেও তা প্রায় ৫০ লাখ বাড়বে। উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরে কালিম্পংয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডিম উৎপাদনে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানিয়েছিলেন মমতা। তিন বছরের মধ্যে বাংলাকে ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলেছিলেন মমতা। ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি করে পোলট্রি ফার্মের কথা বলেছিলেন তিনি। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এদিন জানান, তিন বছর সময়সীমার আগেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে রাজ্য সরকার।