গার্ডেনরিচে বেআইনিভাব নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত ২। এখনও চাপা পড়ে আছেন প্রায় ৭ জন। মোট ২৩ জন ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে পড়েছিলেন। এই ঘটনায় তৃণমূলকে দুষলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। সকালে মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেই জানান নির্মাণ 'বেআইনি' ছিল। তবে এই ঘটনাতেও বাম আমলকে টানেন তিনি। বাম আমল থেকে এই রীতি চলে আসছে বলে দাবি করেন ফিরহাদ হাকিম।
সোমবার সকালে দিলীপ ঘোষ বলেন, "পশ্চিমবাংলায় বেআইনি বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট ভালই হচ্ছে। তাতে কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি সবাই টাকা খাচ্ছে। এখানে নির্মীয়মাণ ব্রিজ ভেঙে পড়ে, ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে, এখন বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। বিল্ডিংয়ে যদি রং করে দিয়ে দিত, তারপর মানুষ তাতে থাকত, তারপরে ভেঙে পড়ত তাহলে কি অবস্থা হত? এই যে দুর্নীতি হচ্ছে যেখানে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে লোকাল লিডারদেরকে, কাউন্সিলরদেরকে। ফলে কোনওরকমে ইট-সিমেন্ট দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বাড়ি। যে কিনছে সে তার পুরো জীবনটাও কাটাতে পারবে না। এই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ব্যাপক দুর্নীতি তার কারণ। সরকারকে সতর্ক হতে হবে। এগুলির তদন্ত হওয়া দরকার। নতুন নতুন যে বিল্ডিং, ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগের অবস্থা এইরকমই আছে। আমার মনে হয় ক্রেতাদের সাবধান হওয়া উচিত। টেস্ট করে নেওয়া উচিত।"
এদিকে রাতভর ঘটনাস্থলে কাটান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সকালে তিনিই জানান, "আমি ও সুজিত সারা রাত ছিলাম। তাও দুটো মানুষকে বাঁচাতে পারলাম না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বেআইনিভাবে বহুতলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় ২১ জন মানুষ চাপা পড়েছিল। এখনও পর্যন্ত ২ জন মৃত। ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা চিকিৎসাধীন। যারা চাপা পড়েছেন তারা একেবারে গরিব মানুষ, টালির চালে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা ও আহতদের পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে কিনা কাউন্সিলরের দেখার দায়িত্ব নয়, আধিকারিকের। আমি এত সুবিধা করে দিয়েছি তাও কেন এত বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে জানি না। সিপিএমের আমল থেকে ট্রেন্ড চলে আসছে। প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে। প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে।"
এদিন ঝুপড়ির ওপর ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বহুতল। সোমবার মাঝরাতে গার্ডেনরিচ থানা অন্তর্গত ফতেপুর এলাকায় তাঁতিপাড়ায় তখন রাত ১২টা। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বেশিরভাগ ঝুপড়িবাসী। জলাভূমি বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণ বলে দাবি করেন এলাকাবাসীরা। মধ্যরাতে বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। এলাকার মানুষ তখনও ঠাহর করতে পারেনি, কী হয়েছে। সকলে ভাবেন ভূমিকম্প হয়েছে। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁরা দেখতে পান গোটা এলাকা ধুলো ধোঁয়ায় ঢেকেছে। যে সময় নতুন নির্মীয়মান বহুতলটি ভেঙে পড়েছে তার তলায় চাপা পড়েন বেশ কিছু বস্তিবাসী।