সন্দেশখালির 'দাপুটে' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থানে বসেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল সন্দেশখালিতে। অবস্থান তোলা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে সুকান্তদের। পরে থানা থেকে সুকান্তকে টেনেহিঁচড়ে সরাল পুলিশ। পুলিশের বোটে করে সুকান্তকে নিয়ে গেল পুলিশ। সুকান্তকে আটক করা হয়েছে।
বাধা পেরিয়ে বৃহস্পতিবার অবশেষে সন্দেশখালিতে যান সুকান্ত। সন্দেশখালি থানার সামনে অবস্থানে বসেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। যতক্ষণ না শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হবে, ততক্ষণ অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন সুকান্ত। সেখানে রয়েছেন বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই সুকান্তের অবস্থান তুলে দিল পুলিশ। যা ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল সন্দেশখালিতে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালি যাওয়ার পথে সুকান্তকে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। শেষে পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর উঠে পড়েছিলেন সুকান্ত। পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে বসিরহাটের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে কলকাতায় বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছল। গত সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এদিন ফের সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দেন সুকান্ত। ধামাখালিতে তাঁকে আটকায় পুলিশ। সুকান্তকে সন্দেশখালি যেতে অনুমতি দিলেও তাঁর সঙ্গে বিজেপি জেলা সভাপতিকে যেতে বাধা দেয় পুলিশ। এই নিয়ে কিছুক্ষণ বচসা চলে। পরে সন্দেশখালি পৌঁছন সুকান্ত। সেখানে গিয়ে প্রথমে ধৃত বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন সুকান্ত। তার পরেই থানার সামনে অবস্থানে বসেন তিনি।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান ঘিরে গোলমালের ঘটনার পর থেকেই তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার ওই এলাকা। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। জোর করে জমি দখল, মহিলাদের উপর অত্যাচার, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই নতুন করে তেতে রয়েছে সন্দেশখালি। গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তম, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহকে। ধৃত প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। গত শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে শিবপ্রসাদকে। তবে শেখ শাহজাহান এখনও অধরা। এত দিন পরও তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হল না, এই নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী নেতারা। বৃহস্পতিবার শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধেও বেআইনি ভাবে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়দের একাংশ। শিবপ্রসাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের আরও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বৃহস্পতিবার বলেন, 'আমি ফোর্সের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এখানে সকলের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আমাদের দিক থেকে যা যা করার আমরা করব। যে সমস্যা আছে, আমরা তা শোনার এবং সমাধান করার চেষ্টা করছি। কারও যদি কোনও সমস্যা থাকে, অভিযোগ থাকে, তবে আমরা সব সময় রয়েছি সমাধান করার জন্য।' তাঁর সংযোজন, 'যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ শোনা হচ্ছে এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। যাঁরাই আইন ভঙ্গ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'