বাংলা রাজনীতিতে মহীরূহের পতন। প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। বুদ্ধদেবের প্রয়াণে বঙ্গ রাজনীতিতে এক যুগের অবসান হল।
জানা গিয়েছে, বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। ডেকে পাঠানো হয় চিকিৎসকদের। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে তাঁর জ্বর হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধদেব। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাতে ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়ির বাইরে বেরোতেন না বুদ্ধদেব। অতীতে বেশ কয়েক বার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রতিবারই লড়াই করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। শেষবার গতবছর আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। গত বছর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসার পর বাড়ি ফেরানো হয় তাঁকে। বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। ২০২১ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। সেই সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে সুস্থ হন।
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ জন্ম বুদ্ধদেবের। পাঁচ দশকের বর্ণময় রাজনীতিতে উজ্জ্বল নাম বুদ্ধদেবের। দীর্ঘদিন ধরে পলিটব্যুরো সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বাম দুর্গের অবসান ঘটে। ৩৪ বছরের বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৭৭ সালে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে প্রথম বার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে রাজ্যে স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৯৯ সালে উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। শুধু রাজনীতি নয়, সংস্কৃতিমনষ্ক ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো বুদ্ধদেব।
দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে পাম অ্যাভিনিউয়ে দু'কামরার ফ্ল্যাটে আড়ম্বরহীন জীবন কাটিয়েছেন বুদ্ধদেব। তাঁর পরনে থাকত সাদা ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি। গলার স্বরের গাম্ভীর্য, শব্দচয়ন, স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলায় কথা বলা, সবমিলিয়ে নিজস্ব ছাপ তৈরি করেছিলেন বুদ্ধদেব। অত্যন্ত সৎ মানুষ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে বুদ্ধদেবের। বিরোধী দলের নেতারাও তাঁর সম্পর্কে কখনও কোনও অভিযোগ করেননি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া রাজ্য রাজনীতিতে।