লোকসভা ভোটের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কার্যকর করেছে মোদী সরকার। যা ঘিরে সরগরম রাজনীতির ময়দান। সিএএ কার্যকর করার বিরোধিতা জানিয়ে নতুন করে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ বিরোধিতায় প্রতিবাদ আরও জোরালো করেছেন মমতা। বাংলায় 'সিএএ করতে দেব না' বলে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে সিএএ কার্যকর করা কি ঠেকাতে পারবেন মমতা? কী বলছে সংবিধান?
কোনও রাজ্য কি সিএএ কার্যকর রুখতে পারবে?
দেশের সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্বের বিষয়টি কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। রাজ্যের হাতে নেই। তাই রাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে অস্বীকার করতে পারে না রাজ্য। সংবিধানের ২৪৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার মধ্যে ভাগ করা রয়েছে। লোকসভার প্রাক্তন সচিব পিডিটি আচারি ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছেন, সংসদে পাশ হওয়া কোনও আইন রাজ্যগুলিকে কার্যকর করতেই হবে। অন্য কোনও অপশন নেই রাজ্যের কাছে। তবে রাজ্যের যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। যদি কোনও রাজ্য মনে করে, এতে নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তবে তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।
বস্তুত, সিএএ-র বিরুদ্ধে মোট ২২০টি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। যাঁরা পিটিশন দায়ের করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রও। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী দুবে ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পাশ করা কোনও আইন বাতিল করার ক্ষমতা রাজ্যগুলির নেই। যে রাজ্যগুলি সিএএ-র বিরোধিতা করছে তাদের সংবিধান অনুযায়ী তা করার ক্ষমতা নেই। বাংলার পাশাপাশি সিএএ-র বিরোধিতা করেছে কেরল সরকারও।
সিএএ প্রসঙ্গে মমতা
মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার সভায় সিএএ-র বিরোধিতা জানিয়ে মমতা বলেন, 'সিএএ একটা ভাঁওতা। বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না। সিএএ করতে দেব না। আমার জীবন দিতে তৈরি। কিন্তু মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে দেব না।' তাঁর কথায়, 'ভোটের জন্য ধাপ্পা দিচ্ছে, ভাঁওতা দিচ্ছে। ভোটের আগে প্রতারণা করে নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। সিএএ নিয়ে কেন্দ্রের ঘোষণা বৈধ কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।'
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সোমবার দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কার্যকর করা হয়েছে। সোমবারই এই নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর সিএএ নিয়ে সংসদে বিল পাশ করে মোদী সরকার। পরে সেটি আইনে পরিণত করা হয়। কিন্তু এতদিন হয়ে গেলেও দেশে সিএএ কার্যকর করা হয়নি। অবশেষে চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে এই নিয়ে পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই আইনের ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মের মানুষরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।