মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের পর এবার জলপাইগুড়ির ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সোমবার সকালে বিমানে উত্তরবঙ্গে পৌঁছন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গে রবিবার কালবৈশাখী ঝড়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, আহত অনেকে, ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক বাড়ি। সেই সব এলাকা পরিদর্শন ও আহতদের সঙ্গে কথা বলবেন বোস। নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করার কথা তার। এদিকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার রাতেই জলপাইগুড়ি পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জলপাইগুড়ি শহরের গোসালা মোড়ে অনিমা রায় নামে এক মহিলা রবিবার এই ঘূর্ণিঝড়ের বলি হয়েছেন। জলপাইগুড়ি পৌঁছে রাতেই তাঁর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বললেন। এর জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান মমতা আহতদের দেখতে। এরআগে প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন, 'যত দ্রুত সম্ভব বাড়িঘর তৈরি করতে হবে। যতক্ষণ বাড়িঘর তৈরি না হচ্ছে ততক্ষণ সবাইকে ত্রাণ শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার দিতে হবে সেখানে।' তবে ভোটের আবহে নিজে মুখে কোনও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, 'প্রশাসন প্রশাসনের মতো কাজ করে যাবে। তবে যেহেতু ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে তাই সব কথা আমি বলতে পারি না। যা কথা বলার হয়ে গিয়েছে।' এর আগে বিমানবন্দরে মমতা বলেছিলেন, 'আমার কাছে মানুষের ভালো থাকাটাই শেষ কথা।'
গতকাল বিকেলে কয়েক মিনিটে ঝরে জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিকভাবে আহতদেরকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তারপর জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান হয় । আহতদের মধ্যে দুটো শিশুকে আশঙ্কা জনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে রাতে । এখনো বহু মানুষ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । ঝড়ের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে তাসের ঘরের মতো বাড়িঘর, মোটরসাইকেল, টোটো এবং গাড়িগুলো এক জায়গা থেকে অন্যত্র জায়গায় নিয়ে আছড়ে পড়ে। এই ঝড়ের প্রভাব পার্শ্ববর্তী জেলা আলিপুরদুয়ার, কুচবিহারেও পড়েছে এবং বহু সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন যে হঠাৎ করে এই ঝড় তিস্তা নদীর বক্ষ থেকে শুরু হয় এবং এক বিকট শব্দের মধ্যে দিয়ে বহু বড় গাছকে উপড়ে ফেলেছিল। পরিস্থিতি দেখে দমকল বাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান । এই মর্মান্তিক ঘটনা শুনে রাতেই এসে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও ঝড়ে কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন । স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতা থেকে নিয়ে মন্ত্রীরা সকলেই আহতদের দেখতে হাসপাতালে পৌঁছান। পাশাপাশি মৃত পরিবারের প্রতি সমবেদনা-সহ পাশে থাকার আশ্বাস দেন ।
এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে সে কথা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি এলাকায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু পরিবার। এই ঝড়ে অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।” মোদী আরও লেখেন, “রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ সহায়তা নিশ্চিত করতে বলেছি।” তাঁর সংযোজন, “আমি বাংলার সকল বিজেপি কর্মীদের অনুরোধ করব এই বির্পযয়ের সময় তাঁরা যেন ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করেন এবং তাঁদের পাশে থাকেন।” আজ জলপাইগুড়িতে যাচ্ছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।