লোকসভা ভোট মিটতেই ফের সোশাল মিডিয়ায় দলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেথেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। গত ৮ মে বলাগড়ে নির্বাচনী জনসভার মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মনোরঞ্জনকে বলেন, তিনি যেন ভোটের প্রচারে না আসেন। তিন নেতা নবীন গঙ্গোপাধ্যায়, অসীম মাঝি এবং শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়দের উপরেই ভরসার কথা জানান। মনোরঞ্জন আর প্রচারে আসেননি। হুগলি লোকসভায় তৃণমূল জিতলেও বলাগড়ে বিজেপির থেকে হাজার পাঁচেক ভোটে পিছিয়ে ছিল। এর পরেই মনোরঞ্জন ব্যাপারী নাম না করে খারাপ ফলের জন্য দলের চার নেতানেত্রীকে দুষেছেন ফেসবুক-পোস্টে। লেখেন, “অনেকেই বলেন আমার রাজনীতিতে আসা ভুল হয়েছে। শুধরে নিতে কতক্ষণ? মন চাইলেই চলে যাব।” মনোরঞ্জন ব্যাপারীর পোস্ট ঘিরে প্রবল শোরগোল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এই আবহে এবার মনোরঞ্জনকে পরোক্ষে পদ্ম শিবিরে আমন্ত্রণ জানালেন বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার ফের একবার বেসুরো শোনায় তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে। তিনি বলেন, ‘পুরনো না মুছলে নতুন লিখব কী করে! পুরনোগুলো মাথার উপর চেপে বসে থাকলে, নতুন ভাবনা তো আসবে না।’
আরও বলেন, দল অস্বস্তিতে পড়লেও বলাগড়ে নিয়ে লেখা চলবে। তবে এখনই যে তিনি বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না সে কথাও জানিয়ে দেন তিনি। সাধারণ মানুষকে পরিষেনা দেওয়ার জন্য আপাতত বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না বলে দাবি করেন। বলাগড়ে তৃণমূল পিছিয়ে পড়ার জন্য কেউ কেউ দায় ঠেলছেন এলাকার বিধায়ক অর্থাৎ তাঁর দিকেই। যদিও সেই অভিযোগ মানতে নারাজ মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তাঁর বক্তব্য, ভোটের প্রচারে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়নি। ফলে এর দায় তাঁর উপর চাপানো যায় না। মনোরঞ্জন বলছেন, ‘দলের কিছু লোকের কাছে চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছি। তারা আমার বিরুদ্ধে দলনেত্রীর কাছে নানান কথা বলেছে। ফলে তিনিও তিতিবিরক্ত হয়ে আমাকে বলেছেন, আমাকে আর নির্বাচনী প্রচারে থাকতে হবে না। আমিও আর থাকিনি। দুঃখের বিষয়, বলাগড়ে আমরা না লড়েই হেরে গেলাম। আমি রাজনীতি চাইলে কী হবে? রাজনীতি যদি আমাকে না চায়!’
এদিকে তৃণমূল বিধায়কের অসন্তোষের আঁচ পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপিও। হুগলির বলাগড়ের এই বিধায়ককে সরাসরি দলে যোগ না দিতে বললেও রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেন তাঁদের বিজেপি সঙ্গে নিয়েই রাখে। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "উনি এখনও ওই দলে কী করছেন?" একই সঙ্গে শমীকের কৌশলী বার্তা, "বাংলাকে দুর্নীতি মুক্ত করা বিজেপির প্রধান লক্ষ্য। আর যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন, বিজেপি তাঁদের সমর্থন করে।"
মনোরঞ্জনের দাবি, তিনি তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজের বিদ্রোহী অবস্থানেই অনড় রয়েছেন। স্পষ্ট করেছেন, এলাকার মানুষের স্বার্থে তিনি সময়ের আগে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না। নিজেই জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে দল তাঁকে আর প্রার্থী করবে না। সেক্ষেত্রে তিনি কি বিজেপিতে নাম লেখাবেন? সরাসরি 'হ্যাঁ' কিংবা 'না'তে জবাব দেননি মনোরঞ্জন। বলেছেন, 'সেটা সময় আর মানুষ বলবে।'