পূর্বাভাস মতোই সোমবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল ‘ইয়াস’। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, সোমবার সকালে সাড়ে ৮টা নাগাদ ওড়িশার বালাসোর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ঘর্ণিঝড় ইয়াস। বেলা অবধি সেখাণে দাঁড়িয়েই শক্তি সঞ্চয় করেছে। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা 'সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম' বা শক্তিশালী ঘর্ণিঝড়ে বদলে যাবে। এদিকে এদিন দুপুরে আরও এগিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। মৌসম ভবনের বুলেটিন অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ১২টায় দিঘা থেকে ৬২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। হাওয়া অফিস বলছে, গতি বাড়িয়ে আগেই আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেক্ষেত্র বুধবার দুপুরের পরই আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস
মৌসম ভবন বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় শক্তি বাড়িতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস । এরপর উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছবে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ওই দিন দুপুরেই পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে ইয়াস। এর আগে জানানো হয়েছিল, বুধবার সন্ধ্যায় আছড়ে পড়বে ইয়াস। বর্তমানে দিঘা থেকে ৬২ ০ কিমি দূরে রয়েছে ইয়াস।
কত বেগে বইবে ঝড়?
গত ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ২ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ঘর্ণিঝড় ইয়াস। নিয়ম অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত তার গতিবেগ বাড়বে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় এই মুহূর্তে ১৬ ডিগ্রি ৪ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি ৬ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে আন্দামানের পোর্ট প্লেয়ার থেকে ৬২০ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে ইয়াস। ইয়াস-এর প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বইবে বলে জানা গিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার বিকেলের পর থেকে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছে যেতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়। কখনও কখনও তা ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলতে পারে। মঙ্গলবার রাতে ঝড়ের বেগ আরও বেড়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার হতে পারে। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছে যেতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। বুধবার সকাল থেকে ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়। কখনও কখনও তা ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলতে পারে। মৌসম ভবন বলছে, বুধবার ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি। তবে আবহবিদদের মতে, গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আমফানের থেকে দাপট কম হবে ইয়াসের।
বাংলাজুড়ে বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে বাংলা জুড়ে বৃষ্টি চলবে। আজ থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে । মঙ্গলবার দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে নদিয়া, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে মালদা, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি জেলায়।
কোথায় আছড়াবে ইয়াস
সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টা ১১৭ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলে সেটি হারিকেন পর্যায়ে চলে যায়। সেক্ষেত্রে ইয়াসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার অবধি পৌঁছে যেতে পারে। তাই সাফির-সিম্পসন স্পেলে একে তৃতীয় ক্যাটাগরির হারিকেনের পর্যায় ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলেই জানিয়েছে আলিপুর। বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছনোর কথা ইয়াস-এর। তার পর বুধবার দুপুরেই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস।
বাংলাদেশেও পড়বে প্রভাব
ইয়াসের মোকাবিলায় সবধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারও। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুই শতাধিক স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্যে একশ বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও রয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সাগরে নতুন আরেকটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান হাসিনা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরকে প্রস্তুতি সংক্রান্ত নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।