পাশের ঘরে মায়ের দেহ। ছড়াতে শুরু করেছে কটু গন্ধ। আর তাই নিয়েই নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখল ছেলে। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের সাতালি চাবাগানের ঘটনা। সোমবার রাতে স্থানীয়দের মারফত খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এরই মধ্যে ঘটনাটি কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে রহস্য।
বচসা শুনেছিলেন স্থানীয়রা
স্থানীয় সূত্রে খবর, ফিটার লাইনে থাকতেন চাবাগানের কর্মী আবির তিরকি (৩০) ও তাঁর মা সোমালি তিরকি (৬০)। এলাকাবাসীর দাবি, শনিবার মা-ছেলের তীব্র বচসা হয়। সেটা তাঁরা শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই সব চুপ। শনিবারের পর থেকে তাঁদের দু'জনকে আর কেউ দেখেননি বলে জানাচ্ছেন।
এরপর সোমবার ফিটার লাইনের আবাসন থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয়রা আবিরের বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন একটি পড়ে সোমালি তিরকির নিথর দেহ। পাশের ঘরে ছেলে আবির তিরকি। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় হাসিমারা ফাঁড়িতে। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি, আবির তিরকিকেও আটক করা হয়।
সোমালি তিরকির মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছে, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। মঙ্গলবার হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠাবে বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত। পুলিশ সূত্রে খবর, আবির তিরকির মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, মা-ছেলের মধ্যে বচসার কারণও জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সম্ভাব্য কারণ খুঁজছে
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান দেহের অবস্থা অনুযায়ী সম্ভবত দুই দিন আগেই সোমালি তিরকির মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান পুলিশ আধিকারিকরা।
স্থানীয়দের দাবি, মা-ছেলের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল। তবে ঘটনা খুন না স্বাভাবিক মৃত্যু, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আতঙ্কে এলাকাবাসী
এলাকায় এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মা-ছেলের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হত। তবে এমন ঘটনা যে ঘটবে, তা কেউ কল্পনাও করেননি। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
কোন মানসিক অবস্থায় মানুষ এমনটা করে?
খুনের ঘটনা বাদ দিলে, নিকট আত্মীয়ের দেহ আগলে বসে থাকা সাধারণত কোম্পলসিভ গ্রিফ ডিসঅর্ডার (Compulsive Grief Disorder) বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD)-এর লক্ষণ হতে পারে। এই মানসিক পরিস্থিতিতে কোনও ব্যক্তি হঠাৎ প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেন না। শোক, অপরাধবোধ বা বিচ্ছেদের ভয়ে স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি লোপ পায়। আর তখনই তিনি মৃতদেহের সঙ্গে থাকতে চান। মানসিক অসংলগ্নতা, বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্নতা, আতঙ্ক বা ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।