দিল্লি পুলিশের একটি সরকারি চিঠি ঘিরে ব্যাপক আক্রমণে নামল তৃণমূল। সেই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেকারণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস। একে ‘পরিকল্পিত অপমান’ এবং ‘বাঙালিকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার চক্রান্ত’ বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।
সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের পাঠানো একটি চিঠি এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাতে দেখা যাচ্ছে, দিল্লি পুলিশ অনুবাদকের প্রয়োজন জানিয়ে লিখেছে, ‘বাংলাদেশি ভাষা অনুবাদ করতে পারেন এমন কাউকে প্রয়োজন’। অভিযোগ, বাংলা ভাষাতেই লেখা কিছু নথি অনুবাদের জন্য এই অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। আর সেখানেই বিতর্ক, কারণ তৃণমূলের দাবি, সেখানে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশের একটি সাংবিধানিক ভাষার মর্যাদাহানি করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, 'এটি কোনও ভুল নয়। এটি একটি পরিকল্পিত অপমান। সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত একটি ভারতীয় ভাষার পরিচয় কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষী ভারতীয়কে তাঁদের নিজের দেশেই বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার সরকারি প্রয়াস চলছে।'
তৃণমূল আরও মনে করিয়ে দেয়, বাংলা ভাষায় বিশ্বজুড়ে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ কথা বলেন এবং এটি ভারতের ২২টি সাংবিধানিক স্বীকৃত ভাষার একটি। সেই ভাষাকে 'বাংলাদেশি' বলা একটি মারাত্মক অপমান, এবং ‘অবৈধ’ আখ্যা দেওয়ার এক চক্রান্ত বলে অভিযোগ করে দলটি।
এই ইস্যুতে বিজেপির তরফে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, 'বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তুলে ধরে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। পুরো বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়।'
তবে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে বাঙালি অস্মিতার প্রশ্নটি ফের জোরালোভাবে উঠে এসেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ বারবার তুলেছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশের বিতর্কিত ভাষা-উল্লেখ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা বাংলাকে, বাংলা ভাষাকে ও বাঙালি পরিচয়কে ছোট করার এবং আঘাত করার শামিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এখন দিল্লির এই ঘটনা সেই আন্দোলনকে আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।