দিলীপ ঘোষ আছেন। আবার দিলীপ ঘোষ নেই। দিলীপ ঘোষ খবরে আছেন। দিলীপ ঘোষ দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেই। মর্নিংওয়াক নিয়মিত চলছে। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে নিজের মতও প্রকাশ করছেন। তবুও বাংলার গেরুয়া রাজনীতিতে রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি বর্তমানে কার্যত ব্রাত্যই। এখন প্রশ্ন হল, দিলীপ কি শেষমেশ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন? দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন থেকে যা যা ঘটছে, তা যেন অন্য দিলীপের বিষয়ে চিত্রনাট্য লেখারই ইঙ্গিত। কখনও তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন, কখনও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন তৃণমূল নেতা। আবার রাজ্য বিজেপি-র নেতাদেরও একাংশ দিলীপকে টার্গেট করেছেন।
মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনাই শোনা যাচ্ছে দিলীপের গলায়। আজ অর্থাত্ সোমবার হিংসাকবলিত মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপের বক্তব্য, আরও আগেই যাওয়া উচিত ছিল। তাঁর কথায়, 'মুখ্যমন্ত্রীর তো আগেই মুর্শিদাবাদ যাওয়া উচিত ছিল। কেন যাননি? বারবার মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলছে। হিন্দুদের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেরি করে যাচ্ছেন, যাতে সব হিংসার চিহ্ন মুছে দেওয়া যায় আগেই।'
দিলীপবাবু কি সত্যিই দলবদলের ফুল ফোটাচ্ছেন?
দিলীপ ঘোষ নামটা শুনলেই কারও মনে পড়ে 'গরুর দুধে সোনা'। কারও চোখে ভেসে ওঠে হাঁটু দেখা শর্টস আর সকালের চা-চক্রে দেশ বাঁচানোর পরিকল্পনা। কিন্তু সম্প্রতি যেটা দেখা যাচ্ছে, তা আর কোনও চা-চক্র নয়, যেন ফুল-চক্র। কখনও কেউ ফুল নিয়ে আসছেন, কখনও তিনি ফুল দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—দিলীপবাবু কি সত্যিই দলবদলের ফুল ফোটাচ্ছেন?
দিনকয়েক আগেই এক তৃণমূল নেতা এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। হাতে ছিল ফুলের তোড়া। সোশ্যাল মিডিয়া তো তাতে পাগল! কেউ বলছে, 'ভাইরে ভাই, দিলীপদা বুঝি এবার ঘাসফুল হাতে!' কেউ বলছে, 'বিজেপির পুরোনো খেলোয়াড় এবার যেন তৃণমূলের হাফপ্যান্ট পরতে চলেছেন!' আর কেউ কেউ তো আড়ালে বলেই দিল, 'আসলে দিলীপদা যেদিকে তাকান, গেরুয়া ছাই সেদিকেই হালকা হয়ে আসে।'
'দলবদলের আগে রাজনীতির পুরনো নাচ'
অথচ, দিলীপবাবুর নিজের মুখে শোনা যাচ্ছে, 'আমি বিজেপিতেই আছি, থাকব।' কিন্তু তাঁর কথা শুনে গেরুয়া শিবিরের ভ্রু কিছুটা হলেও কুঁচকে আছে। অনেকে ভাবছে, এটা কি 'দলবদলের আগে রাজনীতির পুরনো নাচ'?
বিয়ের পর থেকেই খবরে দিলীপ ঘোষ। তাঁর বিয়েতে মেনুতে ছিল খাঁটি দেশি খাবার। আর নিমন্ত্রণ পত্রে লেখা ছিল, 'বিয়েতে আসুন, কিন্তু কোনও রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে নয়!' তবুও অনেকেই সেখানে পতাকা না নিলেও মনের মধ্যে একটা ছোট্ট দল নিয়ে গিয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষের বিয়ে যে রাজনৈতিক জল্পনার হটস্পট হয়ে উঠবে, সেটা কেউ বুঝতে পারেনি।
‘ঘাসফুল ও গেরুয়া: একটি অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনি’
অনেকে বলেন, দিলীপ ঘোষ না থাকলে বাংলার রাজনীতির একটা পর্বই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর মন্তব্যগুলি তো রাজনৈতিক বিনোদনের চূড়া। তিনি একবার বলেছিলেন, 'ওঁকে দেখলেই মনে হয় তিনি রেগে থাকেন কারণ চা খেতে ভুলে গেছেন।' তবে এবার ফুলের রাজনীতি নিয়ে তাঁর এই নীরবতা, আবার কখনও ছবিতে দেখা যাচ্ছে মিষ্টি হাসি—সব মিলিয়ে যেন একটি ‘রাজনৈতিক রোমান্স থ্রিলার’ চলছে! নাম রাখা যায়, ‘ঘাসফুল ও গেরুয়া: একটি অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনি’।
সাধারণ মানুষ কিন্তু এই নাটক দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। একজন ফেসবুকে লিখেছেন, 'যদি দিলীপ ঘোষ তৃণমূলে যান, তাহলে গেরুয়া পতাকাও হয়তো ‘ঘাসফুল’ ফোটাবে!'
শেষমেশ দিলীপবাবু কী করবেন? তিনি এখনও বলছেন, 'আমি দলের সৈনিক। দলেই আছি। নির্দেশ অনুযায়ী চলি।' কিন্তু নির্দেশটা কি বিজেপির, না তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘ফুলের বার্তা’—সেটা নিয়েই সব গণ্ডগোল!
একটাই কথা, 'রাজনীতিতে ফুল দিলে বুঝতে হবে—কেউ না কেউ গন্ধ পাচ্ছে।'