পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে সবুজের বীজ বপন করেছিলেন তিনি। প্রায় ৫,০০০ গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অসামান্য ভূমিকার জন্য মাত্র দেড় বছর আগে পদ্মশ্রী সম্মান পান দুখু মাঝি। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পেলেও আজও ভাঙা মাটির কুঁড়েঘরেই কাটছে এই ৮০ বছরের বৃদ্ধের দিন।
স্থানীয় মানুষ তাঁকে স্নেহভরে ডাকে ‘গাছ দাদু’ নামে। কৈশোর থেকেই পাহাড়কে সবুজ করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন মাঝি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাঁর নাম বহুবার আলোচনায় এসেছে। অথচ তাঁর জীবনযাত্রার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অবিরাম বৃষ্টিপাতে ভিজে গেছে ঘরের মাটির মেঝে, প্রবেশপথ আটকে রাখতে হয়েছে খড়ের গাদা। চারদিকে ফুটো দেয়াল, চুঁইয়ে পড়া ছাদ, যে কোনও সময় ধসে পড়তে পারে বাড়িটি।
বাড়ির বাইরে চক দিয়ে লেখা লাল বোর্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে, 'ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুরস্কৃত, দুখু মাঝি।' অথচ সেই গর্বের সাইনবোর্ডের পাশেই রাখা একটি পুরনো সাইকেল যেন মাঝির দারিদ্র্যের নীরব সাক্ষী।
তিনি বর্তমানে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন। একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় আবেদন করলেও সরকারি সহায়তা পাননি। যে মানুষ প্রকৃতিকে রক্ষা করেছেন, গাছের ছায়া দিয়েছেন হাজারো মানুষকে, তাঁর নিজের মাথার উপর সুরক্ষিত ছাদ নেই।
অবস্থা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসতেই নড়েচড়ে বসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মাঝির জন্য স্থায়ী বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ২ লক্ষ টাকা সাহায্যের ঘোষণা করেন এবং নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
দুখু মাঝি নিজেও আক্ষেপ করে বলেছেন, বড় ছেলের দখলে সরকারি প্রকল্পের বাড়ি থাকলেও সেখানে পুরো পরিবারকে রাখা সম্ভব হয়নি। তাই আজও তাঁর একমাত্র স্বপ্ন, এমন একটি বাড়ি যেখানে তিনি ও তাঁর পরিবার সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারবেন।