প্রায় ১ হাজার জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, আদালতের একাধিক রায়, পর্যবেক্ষণ, ৫টি এফআইআর। পশ্চিমবঙ্গে কুখ্যাত SSC দুর্নীতি, টাকা বিনিয়মে চাকরি মামলায় কঙ্কাল একের পর এক বেরিয়ে আসছে।
উত্তর ২৪ পরগনার গোপালপুরে সফিকুল হক ভাগ্যবান। কম র্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে গোপালপুর পপুলার অ্যাকাডেমি হাইস্কুলে ইতিহাসে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত বরখাস্তের নির্দেশ আসেনি।
আউট-অফ-টার্ন সিলেকশন
মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া জনজাতির OBC কোটায় সফিকুলের ১২১ র্যাঙ্ক ছিল দু'বছর আগে। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন তাঁকে চাকরি দেয়। একমাস পর নিয়োগ পত্র হাতে পেয়েছিলেন সফিকুল। India Today-র RTI-এ জানা গেল।
সফিকুল হক কীভাবে চাকরি পেলেন? সফিকুলের অকপট উত্তর, ওঁরা (SSC) বিবেচনা করে বুঝেছে।
India Today রিপোর্টার জিগ্গেস করলেন, 'আপনার র্যাঙ্ক কত ছিল?'
সফিকুল হক বললেন, '১২১ ছিল।'
রিপোর্টার জিগ্গেস করলেন, 'কীভাবে চাকরি হল?'
ইতিহাসের শিক্ষক সফিকুলের সটান জবাব, 'আপনি এটা কমিশনকে জিগ্গেস করুন।'
--মেধা তালিকা এড়িয়ে যাওয়া
ইলিয়াস বিশ্বাস, সফিকুল হকের ঠিক বিপরীত মেরু। মেধা তালিকায় ৯৫ র্যাঙ্ক। অথচ ইলিয়াস বিশ্বাসের চাকরি হয়নি। ইলিয়াসের কথায়, 'আমার চেয়ে কম র্যাঙ্কে অন্যান্যরা চাকরি করছে। আমি এখনও লড়ে যাচ্ছি। এটা অন্যায়।'
শেখ ইনসান আলি ২০২০ সালে কম র্যাঙ্ক হয়েও চাকরি পেয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের অর্ডারে এ বছর তার চাকরি গেছে। এসএসসি দুর্নীতির অভিযোগে যে ১ হাজার জনের চাকরি গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ ইনসান আলি। আলির কথায়, 'আমি বোকামি করেছিলাম। আমাকে বলির পাঁঠা করা হল। বিক্ষোভ আন্দোলন যাতে বন্ধ হয়, তার জন্যই আমায় চাকরি দেওয়া হয়েছিল।'
শিক্ষকদের সিন্ডিকেট?
হুগলি জেলায়, সুশান্ত ভট্টাচার্য, উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রাইমারি বিভাগের হেড স্যার। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তাঁর দাবি, শিক্ষক সংগঠনগুলি সিন্ডিকেটের মতো কাজ করছে। নিম্নমেধার প্রার্থী স্রেফ তেল মেরে চাকরি টিকিয়ে রাখছে।
সুশান্ত ভট্টাচার্য দুটি কেস স্টাডি বললেন। তাঁর-ই স্কুলে। সুমনা নিয়োগি ও চন্দ্রিমা দেব। সুশান্তর দাবি অনুযায়ী, দুজনেই ২০১৭ সালে স্কুলে চাকরির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়। আদালতের নির্দেশে দুজনেরই এখন চাকরি নেই। আমার স্কুলের দুই শিক্ষিকার চাকরি গেল।
কত টাকা ঘুষ? জিগ্গেস করলেন রিপোর্টার।
সুশান্তবাবু উত্তর, '১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। চন্দ্রিমার ছেলের ১২ বছর বয়স। স্বামী মেরেকেটে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। সম্পত্তি বিক্রি করে ঘুষ দিয়েছিল চাকরিটার জন্য।'
রিপোর্টার জিগ্গেস করলেন, ঘুষটা কাকে দিতে হয়েছিল?
সুশান্তবাবু বললেন, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনকে।