তৃণমূলের অন্যতম শক্ত গড় হাওড়া জেলা। একদা বাম দুর্গ ২০১৬ নির্বাচনে ঘাসফুলকে ঢেলে সমর্থন করেছিল। সেই জেলা জুড়েই এখন বেসুরো হাওয়া। একের পর এক বেসুরো গাইছেন বিধায়ক থেকে মন্ত্রী। এর মধ্যেই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাজনৈতিক সন্ন্যালের কথা ঘোষণা করেছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। এই আবহে হাওড়া জেলা তৃণমূলের দায়িত্ব ফিরহাদ হাকিমের ওপরেই দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনিতেই কলকাতা পুরসভা সামলানো, তার ওপর পুর ও নগোরন্নয়নমন্ত্রক। তবে হাওড়া জেলা তৃণমূলের বাড়তি দায়িত্ব পেয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলার ভাঙন আটকানোই তাঁর প্রধান কাজ। সেই সঙ্গে আগামী ২০২১-এর ভোটে হাওড়ার ১৬টি বিধানসভা আসনেই ঘাসফুল ফুঁটবে বলে দাবি করেন তৃণমূলনেত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন এই নেতা।
জানা যাচ্ছে হাওড়া জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রথম ফোনটা নাকি রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে করেছিলেন ফিরহাদ। তৃণমূলে যেকজন বেসুরো গাইছেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন জোমজুড়ের বিধায়ক রাজবী। একাধিকবার প্রকাশ্যে তাঁকে ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এর আগে রাজীবের মান ভঞ্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাতে তেমন কোনও সুফল মেলেনি। এবার ফিরহাদ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের কারণ বোঝার চেষ্টা করেন। জানা যাচ্ছে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব রাজীবকে দেন ফিরহাদ। তবে এসব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি পুরমন্ত্রী। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে স্পষ্ট করে দেন ফিরহাদ। গত বছর জুলাই মাসে ফিরহাদ হাকিমের মুখেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল সিনিয়ররা আগামী প্রজন্মের যেসব নেতাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। সেই সময় একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল রাজ্যেই এই দুই মন্ত্রীকেও। যদিও এর আগে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানোয় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনাও করতে দেখা গিয়েছিল ফিরহাদকে।
এদিকে লক্ষ্ণীরতন শুক্লা মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই ‘অভিমানি’ সুর শোনা গিয়েছে হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী ও বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার গলাতে। তাই লক্ষ্মী সরে যাওয়ার পর ভাস্কর ভট্টাচার্যকে নতুন সভাপতির দায়িত্ব দিয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি তৃণমূলনেত্রী। তাই আবারও হাওড়া জেলা তৃণমূলের ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। এর আগেও অবশ্য হাওড়া জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দীর্ঘদিন সামলেছেন ফিরহাদ। হাওড়া জেলা জুড়ে বিদ্রোহের আগুন ধিকি ধিকি জললেও এখনও জেলার সংগঠন যথেষ্ট মজবুত রয়েছে বলেই দাবি করছেন পুরমন্ত্রী।