দিন কয়েকের ব্যবধান। আর তার মাঝে হারিয়েছেন মা-বাবা এবং ভাইকে। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো শহরকে। সবাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। বলতে গেলে এখন তাঁকে একাই থাকতে হবে।
বীরভূমের সদর সিউড়ি শহরে এত কষ্ট বোধহয় কেউ আগে কখনও পাননি। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, ভাবেননি কেউ। একই পরিবারের ৩ সদস্যকে কেড়ে নিল কোভিড। যিনি বাঁচলেন, তিনি নির্বাক হয়ে গিয়েছেন মৃত্যুর আতঙ্কে। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা শব্দ কেড়ে নিয়েছে তাঁর মুখ থেকে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সিউড়ি শহরের কেন্দ্রস্থল ডাঙালপাড়ায় বাড়ি ব্যাঙ্কের অফিসার রামদাস সিনহার। উচ্চ শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবার বলে পরিচিত এলাকায়। ২০ দিন আগে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ে পরিবারে। তাঁদের পরিবারে ৪ জন সদস্য।
দেখা যায়, একে একে বাবা, মা এবং ভাইবোন- পরিবারের ৪ জনই কোভিড সংক্রামিত হয়েছেন। আরও ভাল চিকিৎসার জন্য সিউড়ি থেকে তাঁদের পাঠানো হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। সেখানাকার কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় তাঁদের।
সেখানে প্রথমে স্ত্রী দীপ্তিকে হারান রামদাস সিনহা। তার কয়েক দিন পড়ে নিজেও প্রয়াত হন। একই ছাদের নীচে শুয়ে মা-বাবার মৃত্যুশোকে পাথর হয়েছিলেন পুত্র রাজদীপ সিনহা। তখন তাঁরও চিকিৎসা চলছিল সেখানেই।
রাজদীপ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। তিনি পিএইচডির করছিলেন। তবে শুক্রবার তাকেও কেড়ে নিল কোভিড। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ রাজদীপের দিদি। তবে তিনি শারিরীক ভাবে দুর্বল।
তার থেকে বোধহয় তাঁকে বেশি দুর্বল করেছে মা-বাবা, ভাইয়ের প্রয়ান। ১৫ দিনের ব্যবধান। পাল্টে গিয়েছে তাঁর জীবন। বাবা, মা, ভাইকে হারিয়ে মৃত্যু আতঙ্কে শোকে নির্বাক পাখি। তিনি বীরভূমের বিদ্যাসাগর কলেজের আংশিক সময়ের অধ্যাপক।
পরিজনদের পাশাপাশি এলাকার মানুষজন সবাই তাঁর পাশে রয়েছেন। কিন্তু যাঁদের কেড়ে নিল কোভিড, তাঁদের তো ফিরে পাওয়া যাবে না। হতবাক সে। পুরো বাড়ি স্যানিটাইজ করতে এগিয়ে এসেছে রেড ভলান্টিয়াররা। আর সে কাজ করতে গিয়ে রেড ভলান্টিয়ারদের চোখে জল চলে এসেছে।
এত চেষ্টা করেও তাঁরা বন্ধু রাজদীপ ও তার পরিবারকে রক্ষা করতে পারলেন না। সে জন্য বোধহয় আরও হতাশ তাঁরা। শোকের পাথর চেপে ধরেছে শহরটার বুকে।