স্কুলের মিডডে মিল একসঙ্গে বসে খাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। সেই ছবি দেখেই অভ্যস্ত শিক্ষক সমাজ ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাজ্জব করার মতো ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের এক প্রাথমিক স্কুলে। সেখানে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য রান্না হয় আলাদা। রাঁধুনি, বাসন-কোসনও পৃথক। সম্প্রতি এই ঘটনা সামনে এসেছে। তারপর থেকে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির, একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার পাঠ পায় ছাত্র-ছাত্রীরা। সেখানেই এমন বিভেদ কেন? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কিশোরগঞ্জ মনমোহনপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর পাঁচটা স্কুলের মতো এই স্কুলেও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বাচ্চারা লেখাপড়া করে। এক বেঞ্চে বসে। একসঙ্গে খেলাধুলো করে। তবে অভিযোগ, খাওয়া দাওয়া করে আলাদা। দুই সম্প্রদায়ের জন্য় রয়েছে আলাদা থালা, বাটি ও রান্নার লোক। তবে গ্যাস সিলিন্ডার একটাই। দু-দিকে পাইপ দিয়ে দুটো ওভেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, যে দুজন রান্নার লোক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন হিন্দু ও অপরজন মুসলিম। যিনি হিন্দু তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য রান্না করেন। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের রাঁধুনিও একই কাজ করেন। তবে কেন তাঁরা এমনটা করেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
স্কুল পরিচালনা করে থাকেন প্রধান শিক্ষক। তিনিই স্কুলের সর্বময় কর্তা। অথচ তিনিও এর কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করে হলে বলেন, 'আমিও এর পক্ষপাতি নই। রান্নার জন্য আমাদের দ্বিগুণ খরচ হয়ে যায়। স্কুলের উন্নতিতে সেই টাকা ব্যবহার করা যেতে পারত। অথচ পারছি না। আমি বাচ্চাদের আরও ভালো খাবার দিতে চাই। কিন্তু তা হচ্ছে না।' স্কুলের মধ্যে এই বিভাজন কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁর হাতে কিছু নেই। তিনি এই বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্কুলে এই ব্যবস্থা চলে আসছে অনেক বছর ধরে। এলাকার সবাই জানে এই ঘটনার বিষয়ে। তবে কেন এমনটা হয়ে আছে তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। স্কুলের রাঁধুনিরা জানান, তাঁদের যেমনটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনটাই তাঁরা করছেন।
এই ঘটনা সামনে আসার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অনেকে। দিনের পর দিন স্কুলে এই বিভাজন চললেও কেন কোনও পদক্ষেপ করছে না জেলা শিক্ষা সংসদ? উঠছে প্রশ্ন। তবে এখনও স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।