দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এমন এক বাদ্যযন্ত্র যা না বাজলে উৎসব যেন সম্পূর্ণই হয় না। ঠিকই ভাবছেন, এখানে ঢাকের কথা বলা হচ্ছে। ঢাকে কাঠি পড়লেই মনে হয় যেন পুজো এসে গিয়েছে। পুজোর সময় সকালে ঘুম ভাঙে ঢাকের তালে। আনন্দ উৎসবের মাঝে ঢাকের তালেই কোমর দোলে উৎসবপ্রেমী মানুষের। অনেক মানুষই আছেন যাদের জীবিকার মূল মাধ্যমই ঢাক বাজানো। সেই রকমই একজন হুগলির কোন্নগরের জগন্নাথ ঘোষ।
তিনি অন্যান্য ঢাকিদের থেকে অনেকটাই আলাদা। বছর ৭০-এর জগন্নাথ হাঁটতে পারেন না ঠিক মতো। খাতায় কলমে তাঁর শরীরে ৮০% প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। একটা সময় ডিমের ব্যবসা করে রমরমিয়ে চলত তাঁর জীবন। আর ঢাক বাজাতেন শখে। তবে বছর ৪০ আগে হঠাৎই তাঁর জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ট্রেন দুর্ঘটনায় বাদ যায় তাঁর একটি পা ও অপর পায়ের বেশ কয়েকটি আঙুল। তারপর থেকেই তাঁর জীবিকা হয়ে ওঠে ঢাক বাজানো। বর্তমানে তিনি নিজে ঠিক করে হাঁটতে না পারলেও, তাঁর ঢাকের বোল শুনে কোমর দুলে ওঠে বহু মানুষের।
কোন্নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জগন্নাথ। তাঁর ঢাকের তালও অন্যান্য ঢাকিদের থেকে অনেকটা আলাদা। তিনি ঢাক বাজান ভিন্ন ধরনের। ঢাকের কাঠি উল্টে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঢাক বাজান তিনি। বিভিন্ন ঢাকের প্রতিযোগিতায় একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন।
জগন্নাথ বলেন, 'দুর্ঘটনার পর থেকে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম এই ঢাক। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, সবেতেই বিভিন্ন প্যান্ডেলে ঢাক বাজাই।' স্থানীয় মানুষের মধ্যে তাঁর ঢাক বাজানো শোনার চাহিদাও রয়েছে বেশ। ঢাক বাজানোর উপার্জনেই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সংসার চালান তিনি।
এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বাবলু পাল বলেন, 'দীর্ঘকাল ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ ঘোষ। পাড়ায় বিভিন্ন পুজোয় তাঁর বেশ কদর রয়েছে। অভাবের সংসারে ঢাক বাজানোই তাঁর একমাত্র ভরসা। বর্তমানে জগন্নাথ ঘোষের যাতায়াতের জন্য একটি ৩ চাকার সাইকেল প্রয়োজন। তাঁরা প্রশাসনের তরফ থেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে, জগন্নাথবাবুকে একটি ৩ চাকার সাইকেল প্রদান করা যায়।