Advertisement

দুঃশ্চিন্তায় বন্যপ্রাণপ্রেমীরা! চৈত্র সংক্রান্তিতে আবার শিকার উত্‍সব

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর গোপগড়ের ছবি দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁরা। শ'খানেক প্রাণী মারা হয়েছে।

চলতি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর গোপগড়ের ছবি। চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন, পরিবেশপ্রেমীদেরচলতি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর গোপগড়ের ছবি। চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন, পরিবেশপ্রেমীদের
অভিজিৎ বসাক
  • কলকাতা,
  • 09 Apr 2021,
  • अपडेटेड 6:45 PM IST
  • এগিয়ে আসছে 'শিকার উৎসব'এর দিনক্ষণ
  • উৎকন্ঠায় রাজ্যের পরিবেশপ্রমী, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কর্মীরা
  • কারণ প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা না নিলে মারা পড়বে শয়ে শয়ে প্রাণী

এগিয়ে আসছে 'শিকার উৎসব'এর দিনক্ষণ। উৎকন্ঠায় রাজ্যের পরিবেশপ্রমী, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কর্মীরা। কারণ প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা না নিলে মারা পড়বে শয়ে শয়ে প্রাণী।

আর তা শুরু করে দিতে এখন থেকেই। হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ (হিল), বন্য-র মতো পরিবেশপ্রমী সংগঠনের বক্তব্য, সারা বছর এই কাজ করলে ভাল হয়। কারণ চলতি বছরের ৩ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর গোপগড়ের ছবি দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁরা। শ'খানেক প্রাণী মারা হয়েছে বলে অভিযোগ।

কোথায় হয়
শিকার উৎসব হয় বাংলার বিভিন্ন জেলায়। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর। মূলত জঙ্গমহলে বেশি হয়। যেমন লালগড়, ঝিটকার জঙ্গলে, আরাবারি বা জয়পুরের জঙ্গল। তবে অনেকে কলকাতাতে চলে আসেন শিকার করতে। পূর্ব কলকাতার জলাভূমি শিকারের জন্য জড়ো হয় তারা।

আরও পড়ুন

কখন হয়
মকর সংক্রান্তি থেকে শুরু বলা যেতে পারে। মাঘী পূর্ণিমা থেকে বড়সড় আকার নেয়। বাংলা ক্যালেন্ডারের তিথি দেখে তা করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শুরু হবে শিকার। এমনই হয়ে আসছে।

শিকার করে কী হয়
শিকারের পর সেই সব প্রাণীর মাংস খায় অনেকে। কেউ কেউ বাড়ি নিয়ে যায়। অনেকে বিক্রিও করে। শিকার করার পর সেগুলো ঢেকে রাখা হয়। পরে খাওয়া হয়। অন্যদিকে, গোসাপের চামড়া দিয়ে ব্যাগ তৈরি হয়। পূর্ব মেদিনীপুরে এমন ছবি দেখা গিয়েছে।

শিকারিরা আশপাশের এলাকা থেকে হেঁটে আসে। অনেকে আবার বা গাড়ি ভাড়া করে আসে। জঙ্গলে ঢুকে শুরু হয় শিকার। সেই শিকারকে ঘিরে সেই এলাকায় মেলা বসে।

কোন প্রাণী শিকার করে
বন্য শূকর, খাটাশ, নেউল, মনিটর লিজার্ড, ফিশিং ক্য়াট, সজারু, নেকড়ে, শিঁয়াল, পাখি। বলা ভাল হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা-ই মেরে ফেলে। এমনই জানাচ্ছেন বন্যপ্রেমীরা।

কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়
বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বল্লম, লাঠি, কুড়ুল, তির ধনুক, গুলতি। পুরুলিয়ার এক জায়গায় বন্দুক দিয়েও শিকার করতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

আইন কী বলছে
যা শিকার করা হয়, বন্যপ্রাণ আইনে সব ক'টির শিকার নিষিদ্ধ। কড়া শাস্তির কথা বলা রয়েছে আইনে। ৩-৭ বছর জেল, ১০-২৫ হাজার টাকা জরিমানা। আদিবাসীদের অধিকারের মধ্যেও তা পড়ে না। ওই সব প্রাণী মারা, শরীরের অংশ সংগ্রহ, ব্যবসা করা নিষিদ্ধ।

পরিবেশপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, অনেক দিন ধরেই এ চর্চা চলছে। শিকার যে অনৈতিক, আইনবিরোধী, পরিবেশের ক্ষতি করে, বেশির ভাগই তা জানে। তবে মানতে চায় না। বন সুরক্ষা সবার কাজ। শুধু বন দফতরের কাজ নয়। শিকার বন্ধ করতে গেলে এই সময় ওই সব এলাকায় জমায়েত বন্ধ করতেই হবে।

প্রশাসন কী করছে
প্রশাসন সচেতনতার কাজ করছে। আর কী করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি তাদের জানিয়েছে। জমায়েত বন্ধ করতে পারে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সচেতনামূলক অনুষ্ঠান করেছে। করা হয়েছে রোড শো। স্থানীয় মানুষকে বন্যপ্রাণ, পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝান হয়। সহযোগিতায় রাজ্য বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং 'বন্য'।

বন্যপ্রেমীদের বক্তব্য

শুক্রবার হিল-এর তরফে মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, জমায়েত বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে কোনও প্রকারের বন্যপ্রাণ হত্যা আইনত নিষিদ্ধ। কোনও আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই ছাড় নেই। আইন তো তা-ই বলছে। শিকার বন্ধ করতে শুধু বন দফতর নয়, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ, বন্যপ্রণ নিয়ে কাজ করে বন্য নামে একটি সংগঠন। তারা জানাচ্ছে, এখানেও শিকার হয়। যার শুরু হয় সাধারণত জানুয়ারি মাস থেকে। চলে মে মাস পর্যন্ত। যা পরিচিত শিকার উৎসব নামে। ফলহারিণী কালীপুজো, চৈত্র সংক্রান্তি, মকর সংক্রান্তির মতো উৎসবের সময় শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হয়। আর শিকার করে।

ওই সংগঠনের পক্ষে শমীক দত্ত এবং সৌম্যদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে কড়া হাতে পদক্ষেপ করতে হবে। তা হলেই রোখা যেতে পারে শিকার।

 

Read more!
Advertisement
Advertisement