
কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে জগদ্ধাত্রী পুজো। আলোয় মালায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে গোটা শহর। স্টেশন রোড, তালডাঙ্গা থেকে তেলিনীপাড়া, সব মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু আলোর খেলা নয়, বিরাট মূর্তির দর্শনের মাহাত্ম্য নয়, রয়েছে আন্তরিক আবেগ। এক নস্ট্যালজিক ইমোশন। যার জেরে দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন প্রতিবছর ভিড় করেন এই ফরাসি সংস্কৃতি ঘেঁষা এই শহরে।
কীভাবে কোথা থেকে দেখতে শুরু করবেন পুজো?
দিনে বা দুপুরে যখনই ঠাকুর দেখুন না কেন, মানকুণ্ড স্টেশন থেকে ঠাকুর দেখা শুরু করুন। তবে রাতে উপরিপাওনা হল চন্দননগরের বিখ্যাত আলোর কারসাজি। যার আসল ঝলক দেখা যায় দশমীর শোভাযাত্রায়। মানকুন্ড স্টেশনে নেমেই স্টেশনরোড ধরে সোজা আসুন জ্যোতির মোড়ে। পথেই দেখুন মানকুন্ডু স্পোর্টিং ক্লাব, নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, চারাবাগানের সর্বজনীন পুজো, গোপালবাগ, লিচুতলা, হালদারপাড়া, রথের সড়ক, বালক সংঘ আর জ্যোতির মোড়ে তেমাথার সবচেয়ে বড় প্রতিমা। যাকে রাণী মা বলে ডাকা হয়। ভদ্রেশ্বরের দিকে গেলে জ্যোতির মোড় থেকে ডানদিকে যেতে হবে। হাঁটা পথেই দেখুন ছুতোর পাড়া, অরবিন্দ সংঘ, বারাসাত ব্যানার্জি পাড়া, বারাসাত গেট, তেঁতুলতলার বিখ্যাত ও জাগ্রত ঠাকুর, চক্রবর্তী পাড়ার সুন্দর সুন্দর প্রতিমা, থিমের মণ্ডপসজ্জা।
যেতে পারেন জ্যোতির মোড় থেকে সোজা গঙ্গার ধারের দিকে। সেখানে দেখতে পাবেন শিবমন্দিরের পুজো, গোন্দলপাড়া আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট পুজো। এদিকেই দেখতে পাবেন অম্বিকা অ্যাথলেটিক্স ক্লাব, চারমন্দির তলা, কাছাড়িঘাট, মরান রোড, সাতঘাট, তেলিঘাট প্রভৃতি। এবার সেখান স্ট্র্যান্ডরোডের দিকে হাঁটা দিন। সোজা গেলে দেখতে পাবেন, দৈবকপাড়া, নোনাটোলা, হাটখোলা মনসাতলা, বেশোহাটা, বড়বাজারের জনপ্রিয় ঠাকুর। দেখতে ছোট্ট শহর, কিন্তু ঠাকুর দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পায়ে হেঁটেই দেখতে হবে। সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার জন্য পাবেন অঢেল দোকান ও রেস্তোরাঁ। ইটালি থেকে ইন্ডিয়ান, বাঙালি থেকে ইউরোপীয় খাবার, সব পাবেন চলতে ফিরতে।
স্ট্র্যান্ড রোড ধরে সোজা চলে গেলে উঠবেন লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে। স্ট্র্যান্ড রোডে দুদণ্ড গঙ্গার হাওয়ায় ফের চাঙ্গা হয়ে হাঁটা দিন শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও আদি মাকে দর্শন করতে। চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি-সহ প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে ভুলবেন না যেন। আদি মা দর্শনের পর মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে আপনার। সব ভুলে চোখ যাবে প্রতিমার গায়ে কয়েকশো কেজি সোনার গয়না ও প্রচুর শাড়ির দিকে। পুজোর কদিন ফুলের মালায় ঢাকা পড়ে যান আদি মা। রাস্তায় কিন্তু কোনও গাড়ি, টোটো বা রিক্সা পাবেন না। সেটা ধরেই আরও এককদম হাঁটা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন। এবার আসুন বিদ্যালঙ্কার দিকে। এদিকে এলে দেখতে পাবেন কলুপুকুর, পালপাড়া, হেলাপুকুর ধার, কাঁটা পুকুর, সুরের পুকুর, হলদেডাঙ্গার সর্বজনীন পুজো। উত্তর ছাড়িয়ে দক্ষিণে গেলে পাবেন তালডাঙ্গা, বোড়ো চাঁপাতলা, বোড়ো দীঘির ধার, সরষেপাড়ার ঠাকুর। এবার জিটি রোড ধরে চন্দননগর স্টেশন রোডের দিকে পা বাড়ান। বাগবাজারের ঠাকুর দেখার পর দর্শন করুন ফটকগোড়া, মধ্যাঞ্চল, খলিসানি। এরপর স্টেশনের অপরপ্রান্তে গেলেই দেখতে পাবেন কলপুকুরধার, শীতলাতলা, বউবাজার, সুভাষপল্লির সুন্দর সুন্দর প্যান্ডেল।
রাতের পরিবেশ অতুলনীয়
রাতের দিকে দেখতে পাবেন চোখ ধাঁধাঁনো আলোর ঝিলিক। সেই আলোতেও রয়েছে থিমের অনুভূতি। রয়েছে বার্তাও। কখনও বিশ্বের নানা ঘটনা, দেশের জনপ্রিয় কাহিনি, কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে শ্রদ্ধার্ঘ দেওয়া, কিংবা রূপকথার কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয় এই টুনিবাল্বের মাধ্যমে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় নীচে নয়, চোখ রাখুন উপরের দিকে। ভিড়ের মধ্যে আপনিই হেঁটে যাবেন। একদিনে হয়তো সবটা ঘুরে দেখতে পারবেন না। সঙ্গে রাখুন পানীয় জল ও শুকনো খাবার। দোকানপাটও বন্ধও থাকবে পুজোর কদিন। তবে সকালে অসুবিধে নেই। প্রচুর রাস্তায় রয়েছে নো এন্ট্রি জোন। বেলা ৩টের পর থেকে সব গাড়ি, এমনকি সাইকেল পর্যন্ত গলতে পারে না শহর চন্দননগরে।