বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা কান্তি গাঙ্গুলি যে কোনও বড় ঝড় হলে সুন্দরবনের 'মসিহা' হিসেবে হাজির হন। বলা হয়, সুন্দরবনের প্রাচীন প্রবাদ রয়েছে যে, ঝড়ের আগে কান্তি আসে। রিমাল যখন তার দাঁত-নখ বের করতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই নদীপাড়ের মানুষের পাশে কান্তি। পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও ধুতি, কাঁধে ফেলা গামছা। এক হাতে ছাতা ও অন্য হাতে ধুতির খুঁট, নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলেছেন তিনি। নজর রাখছেন গোটা পরিস্থিতির ওপর। সতর্কবার্তা দিচ্ছেন গ্রামবাসীদের। সব মিলিয়ে ঝড়ের আগে সুন্দরবনের মাটিতে ফের দেখা গেল চেনা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে।
রবিবার বিকেলে 'বাংলা ডট আজতক ডট ইনকে' তিনি ফোনে বললেন, পূবের হাওয়া বইছে। আর পূবের হাওয়া বইতে শুরু করলে বুঝতে হবে সুন্দরবনের কপালে দুঃখ আছে। রাত ১১টার পর থেকে জোয়ার শুরু হবে। তারপরই আসল পরিস্থিতি বোঝা যাবে। জোয়ারের সময় চারফুট জল বেড়ে যায়, আর যদি পূবের হাওয়া থাকে, তাহলে সুন্দরবনের বিপদ। মাঝারি বিপদ পূব-দক্ষিণের হাওয়ায়। তাহলে নদীবাঁধ ভাঙার সম্ভবনা থাকে। আমফানের সময় হাওয়া পশ্চিমে ছিল তারপর পূবের দিকে ঘুরে যায়।'
পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছেন কান্তি গাঙ্গুলি। বললেন, 'সারাবছরই প্রস্তুত থাকি। এবারেও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ১৫০ ছেলে-মেয়ে চলে এসেছে। রায়দিঘির স্কুলে সেফ হাউস খোলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী সারাবছরই স্টোর করা থাকে। ত্রিপল-ট্রিপল রয়েছে। তবে সবথেকে বেশি দরকার মানুষের মনোবল বাড়ানো।'
উল্লেখ্য, আমফান, বুলবুল, কিংবা ইয়াসের সময়ও সুন্দরবনবাসীকে রক্ষা করতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন কান্তি। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। এবার রিমালের কথা মাথায় রেখে রায়দিঘিতে সেফ হাউস খুলেছেন কান্তি গাঙ্গুলি। প্রয়োজনে সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ঝড়ের দাপটে বা জোয়ারে নদীবাঁধ ভেঙে গেলে পরিস্থিতি সামলাতে কোমর বেঁধে তৈরি রয়েছেন প্রায় ১৫০ ছেলে-মেয়ে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ল্যান্ডফলের সময় যত এগিয়ে আসছে, তত রাজ্যজুড়ে খারাপ হচ্ছে আবহাওয়া। প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সঙ্গে চলছে দমকা হাওয়া। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। অন্যান্য জেলায় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।