জঙ্গিদের গুলিতে কয়েক মিনিটে 'নরক' হয়ে ওঠে 'ভূস্বর্গ' কাশ্মীরের পহেলগাঁও। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে রক্তে ভেসে যায় বাইসরনের 'মিনি সুইজারল্যান্ড'। পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জেনে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় জঙ্গিরা। কারও কাপড় খুলে ধর্ম যাচাই করা হয়। সরকারি ঘোষণায় জানানো গিয়েছে জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭ জন জখম। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলার তিন পর্যটক।
মারা গিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা লেনের বাসিন্দা বিতান অধিকারী, বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ, পুরুলিয়ার বাসিন্দা মণীশ রঞ্জন।
গরমে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ। নিহত সমীর গুহের স্ত্রী সংবাদমাধ্যমে জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তাঁরা ছবি তুলছিলেন। তারপর চেয়ারে বসেছিলেন একটু জিরিয়ে নিতে। হঠাৎই গুলির শব্দ ভেসে আসে। কী ঘটছে বুঝতে পারছিলেন না। স্থানীয়রা তাঁদের শুয়ে পড়তে বলেন। সমীর গুহও তাঁর মেয়েকে বলেন...শুয়ে পড়! কিন্তু ততক্ষণে মুখে মাস্ক লাগিয়ে সামনে এসে গিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। জঙ্গিরা বলতে থাকে 'ইনকো মাত ছোড়না'। এরপর সমীর গুহকে সামনে পেয়ে গুলিতে দেহ ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।
মারা গিয়েছেন আরও এক বাঙালি পর্যটক দক্ষিণ কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা লেনের বাসিন্দা বিতান অধিকারী। টেক্সাস নিবাসী আইটি কর্মী বাড়ি ফিরেছিলেন ছুটি কাটাতে। সেই ফাঁকেই ঘুরে আসার প্ল্যান ছিল কাশ্মীর থেকে। ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়ে প্রাণ দিতে হল বাঙালি এই পর্যটককে। স্ত্রী, ছোট্ট শিশুর সামনে। নিহত হলেন বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারী। ১৬ এপ্রিল স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে যান তাঁরা।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছেন আইবি কর্মকর্তা মণীশ রঞ্জন। তিনি পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন ঝালদা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। কাজের সূত্রে থাকতেন হায়দরাবাদে। মনীশ হায়দরাবাদ থেকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পরিবার-সহ ছুটিতে পহেলগাঁওতে ঘুরতে গিয়েছিলেন।
নিহতদের পরিবারের কারও দাবি সিঁথির সিঁদূর দেখে গুলি করা হয়েছে। কারও হাতে চূড়া। নিহতদের তালিকায় যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সকলেই পুরুষ। কেউ সিঁথির সিঁদূর হারালেন বিয়ের মাত্র চারদিন পর, তো কেউ দু'মাস। জঘন্য এই জঙ্গিহানার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে দেশবাসী। সকলেরই দাবি এই জঙ্গিহানায় কঠোর পদক্ষেপ নিক কেন্দ্র সরকার।