ফুঁসছে বঙ্গোপসাগর। উঠছে উত্তাল ঢেউ। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিই শেষ নয়। আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে নিম্নচাপ। ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হবে, যা ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সরাসরি না হলেও প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গেও। ভারী বৃষ্টিপাত, তীব্র হাওয়া এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা দেখা হতে পারে।
ভারী বৃষ্টিপাতের কমলা এবং হলুদ সতর্কতা
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার বেশ কয়েকটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এখানে ১১৫ থেকে ২০৪ মিমি ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অসম-মেঘালয়, ছত্তীশগঢ়, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্য মহারাষ্ট্র, মারাঠওয়াড়া, নাগাল্যান্ড-মণিপুর-মিজোরাম-ত্রিপুরা, তেলঙ্গানা এবং উত্তর অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকের জন্য একটি হলুদ সতর্কতা কার্যকর রয়েছে, ৬৪.৫ থেকে ১১৫.৫ মিমি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কলকাতায় মেঘ ভাঙার মতো পরিস্থিতি
২৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে ঘন মেঘ কলকাতাকে ঢেকে ফেলেছিল। এই মেঘগুলি এত উঁচুতে (৫-৭ কিমি) ছিল যে এক ঘণ্টায় ৯৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৪৭-২৫২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা শহরের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ২০% এর সমান। ৩৭ বছরের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া বিভাগ (IMD) এটিকে "মেঘভাঙা বৃষ্টির" হিসাবে বর্ণনা করেছে। রাতভর বৃষ্টিপাতের পর সকালে শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
মৃত্যু, জমা জল এবং দুর্ভোগ
বৃষ্টির ফলে কলকাতার জনজীবন থমকে যায়। বিশেষ করে হাওড়া, দক্ষিণ কলকাতা এবং পূর্ব কলকাতায় রাস্তাঘাট হাঁটু সমান জলে ডুবে যায়। নৌকা নামাতে হয়। কমপক্ষে আটজন মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। পরিবহন সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হয়ে পড়ে। ৩০টি বিমান বাতিল হয়, ৪২টি দেরিতে চলে। মেট্রো এবং ট্রেন বন্ধ থাকে। স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখা হয়। মার্কিন দূতাবাসও ছুটি ঘোষণা করে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণকে সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাদের ঘর থেকে বের না হওয়ার এবং বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। জল নিষ্কাশনের জন্য পাম্প লাগিয়ে জল নামাতে হয়। IMD দুর্গাপুজায় ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমলা সতর্কতা জারি করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন এত বৃষ্টি হল?
বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সক্রিয় ছিল। এর ফলে কলকাতায় প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকেছিল। বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে মেঘ ভারী হয়ে উঠছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এরপর কী? সতর্ক থাকুন। ২৪ সেপ্টেম্বর হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। জমা জল কমতে সময় লাগবে।