RG Kar Konnagar Death: আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। চিকিৎসকদের একাংশের কর্মবিরতির ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্য সরকার। এমনই প্রেক্ষাপটে হুগলির কোন্নগরের এক যুবকের, আরজি করে মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মৃত যুবকের নাম বিক্রম ভট্টাচার্য(২৮)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আরজি করে চিকিৎসা পরিষেবার অভাবেই তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি এরপর 'জাস্টিস ফর কোন্নগরে'র ডাক দেন। রবিবার, ঠিক 'রাত দখলে'র ধাঁচেই মোমবাতি, ফ্ল্যাশলাইট মিছিলে সামিল হন বহু মানুষ। মিছিলের নেতৃত্বে মূলত ছিল স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা।
শুধু তাই নয়। কোন্নগরের বিভিন্ন স্থানে পড়েছে পোস্টারও। তাতে লেখা, 'কোন্নগরের যুবক বিক্রমের আরজি করে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?'
ঠিক কী হয়েছিল?
গত সপ্তাহে কোন্নগরের বেঙ্গল ফাইন মোড়ে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় গুরুতর জখম হন বিক্রম। তাঁর দুই পায়ের উপর দিয়ে লরির চাকা চলে যায়। প্রথমে তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অভিযোগ, আরজি করে বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। এমনটাই দাবি বিক্রমের পরিবার-পরিজনের। তাঁদের দাবি, 'প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন বিক্রম'। যদিও পুরোটাই অস্বীকার করছেন চিকিৎসকরা।
বিক্রমের মা কী বলছেন?
বিক্রমের মায়ের অভিযোগ, 'আরজি করে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দু’ঘণ্টা পরে চিকিৎসা শুরু হয়। আরজি করে শুধুমাত্র ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছিল ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কোনও ডাক্তার এগিয়ে আসেনি। এমার্জেন্সি পেশেন্ট। ক্রিটিকাল অবস্থায় ছিল। তারপরেও কোনও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।'
দেখা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিবেকনগর দ্বারিক জঙ্গল বাই লেনে মা ও দিদিমার সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন বিক্রম। বিক্রমের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এরপরেই তিনি বলেন, 'জাস্টিস ফর আরজি কর হলে, জাস্টিস ফর কোন্নগর হবে না কেন?'
স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্ট
কোন্নগরের যুবকের মৃত্যু নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, '৩ ঘণ্টা কোনও চিকিৎসা ছাড়াই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই যুবক।' তিনি আরও বলেন, 'জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ন্যায্য। আমার তাঁদের প্রতি অনুরোধ, এমনভাবে প্রতিবাদ করুন যাতে জরুরি পরিষেবা ব্যাহত না হয়।'
৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ মিছিল
রবিবার 'রাত দখলে'র ধাঁচেই কোন্নগরে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সেখানে 'চিকিৎসার অভাবে' বিক্রমের মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। 'জাস্টিস ফর কোন্নগর' পোস্টার ও স্লোগান দেন। মোমবাতি ও ফ্ল্যাশলাইটের আলো এবং মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান।
কোন্নগরের বিভিন্ন স্থানে পড়েছে 'বিক্রমের বিচার চাই' পোস্টারও।
চিকিৎসকরা যা জানিয়েছেন
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের তরফে দাবি, বিক্রমকে নাকি আরদি করে রেফার করাই হয়নি। বরং তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল।
একইসঙ্গে আরজি করের এমএসভিপি-র দাবি, চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি রয়েছ তাঁদের কাছে।
চিকিৎসক সংগঠন 'জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এর বিবৃতি
চিকিৎসক সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, 'এই বক্তব্য মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণে পলিট্রমায় ভুগছেন এমন এক যুবককে শ্রীরামপুর থেকে বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল এবং আরজি করে নিয়ে আসা হয়েছিল। ৬ সেপ্টেম্বর, ৯টা ১০-এ। কর্তব্যরত ডাক্তাররা অবিলম্বে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যান। বেড হেড টিকিট এবং সেইসঙ্গে RGKMCH-এর MSVP-এর বিবৃতি আমাদের দাবির প্রমাণ।'
সেই সঙ্গে আরও বলা হয়, 'চিকিৎসা না পেয়ে ৩ ঘণ্টা ধরে রক্তপাত হয়নি।' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনার দাবির কোনও সত্যতা নেই।' এটিকে 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানি' বলে উল্লেখ করে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনারও দাবি করা হয়েছে।
ভিডিও পোস্ট TMC-র এক্স হ্যান্ডেলে
'আপনি দাবি করেছেন আমার ছেলে নাকি ট্রিটমেন্ট পেয়েছে। কিন্তু সে তো ট্রিটমেন্ট পায়নি। আমি সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই বিল্ডিং ওই বিল্ডিং দৌড়াদৌড়ি করেছি। ছেলেটা যে আমি ট্রলি করে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সেটা সাহায্য করতেও তো কেউ এগিয়ে আসেনি।' তিনি আরও বলেন, 'তিলোত্তমার মা যেমন একজন সন্তানকে হারিয়েছেন, আমিও তেমন একজন সন্তানকে হারিয়েছি।'