রাজ্যজুড়ে গণপিটুনির ঘটনায় পর পর মৃত্যু হচ্ছে। গত তিনদিনে মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। চোর সন্দেহে গণপিটুনির জেরে আরও এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হুগলিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিশ্বজিৎ মান্না (২৩), তিনি পেশায় গাড়ি চালক। গত শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত, মাত্র তিন দিনের মধ্যে গণপিটুনিতে তিন জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলোতে জেলা প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। গত তিন দিন ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে যাওয়া গণপিটুনির ঘটনায় রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা চরমে। উদ্বিগ্ন প্রশাসনও।
কী ঘটেছে?
মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, রবিবার রাতে বিশ্বজিৎকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এলাকারই কয়েকজন যুবক। গাড়ি চোর সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে বিকাশ সামন্ত, তাঁর ছেলে দেবকান্ত সামন্ত ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মৃত বিশ্বজিৎ এর মায়ের বক্তব্য, চোর সন্দেহে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারের চোটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বিশ্বজিৎ। পরে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে রাত দুটো নাগাদ তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় অভিযুক্ত বিকাশ সামন্ত, তাঁর ছেলে দেবকান্ত সামন্তকে আটক করেছে তারকেশ্বর থানার পুলিশ।
গত তিন দিনে মোট ৫ জনের মৃত্যুর খবর আসছে। গত কয়েক দিনে বাংলার একাধিক জায়গায় গণপিটুনির অভিযোগ উঠছে। কোথাও ছেলেধরা সন্দেহে, কোথাও চোর সন্দেহে গণপিটুনির অভিযোগ উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে প্রশাসনও। প্রশাসনের তরফে বার বার আবেদন করা হচ্ছে, আইন হাতে নিয়ে নিজেরাই বিচার করার চেষ্টা করা কখনোই সমাধান নয়। মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এধরণের ঘটনা সমাজে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এই নৃশংসতা ও আইনের অমান্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা দাবি করছেন। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কোথাও চোর সন্দেহে বেঁধে পেটানো হচ্ছে, কোথাও মারতে মারতে শরীরের হাড় টুকরো টুকরো করে ফেলা হচ্ছে। এর পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আক্রান্তকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকেরা। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, আইন হাতে তুলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ‘সমাধান’ পাওয়ার তাড়নাতেই কি দিন দিন এমন ঘটনা বাড়ছে?
গণপিটুনিতে খুনের অভিযোগ উঠলে কোন ধারা লাগু হবে?
গণপিটুনির ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো বটেই, মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে অপরাধীর। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ (২) ধারায়। দিল্লির কমলা নগর মার্কেট পুলিশ স্টেশনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩ আইনের প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এক হকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৮৫ ধারা রুজু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের ওভারব্রিজে জায়গা দখল করে ঠেলা বসিয়েছিল ওই হকার।