তিলোত্তমা চিকিৎসক হত্যা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্ক থামার কোনো লক্ষণ নেই। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-কর্মী এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এবার বিতর্কে ঘি ঢাললেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। মৃত চিকিৎসকের বাবা-মা সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাননি, এই প্রেক্ষিতে মদন প্রশ্ন তুলেছেন, “তিলোত্তমার মা-বাবা ক্ষতিপূরণ চান? সেটা পরিষ্কার করে বলুন।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠেছে।
মদন মিত্রের বক্তব্য:
মদন মিত্র বলেছেন, “তিলোত্তমার জন্য আমরা সকলেই কেঁদেছি। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোমবাতি মিছিলে হাঁটেছি। কিন্তু তাঁর বাবা-মা প্রথমে ফাঁসি চেয়েছিলেন, পরে কলকাতা পুলিশের তদন্তে আস্থা না রেখে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। সিবিআই তদন্ত হলেও একই তথ্য উঠে এসেছে। এখন আবার তাঁরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তাড়াহুড়োতে সঠিক বিচার হয়নি। তাহলে কি ক্ষতিপূরণ চান? সেটা স্পষ্টভাবে বলুন।”
মদন আরও বলেন, “আপনারা যদি বলেন ক্ষতিপূরণের প্রয়োজন, তাহলে এই মুহূর্তে হাজার-হাজার কোটি টাকা উঠে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই সাহায্যের হাত বাড়াবেন। কিন্তু বারবার অবস্থান বদলালে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এই টাকাগুলি তিলোত্তমার নামে ভালো কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া:
মদন মিত্রের মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। সিপিএম নেতা এই মন্তব্যকে “স্বভাবসিদ্ধ অসভ্যতার উদাহরণ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, “মদন মিত্র কিছুদিন আগেই জন্মদিনে দুধে স্নান করেছিলেন। তিনি কি এবার অর্থের প্রলোভন দিয়ে ক্ষতিপূরণের নামে মুখ বন্ধ করতে চাইছেন?”
বিরোধী শিবির থেকে আরও অভিযোগ উঠেছে, তিলোত্তমার বাবা-মায়ের আবেগ নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করছে। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস—সব পক্ষই বলছে, এমন মন্তব্য মানুষের সহানুভূতি ও বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তৃণমূল নেতাদের অবস্থান:
তৃণমূলের অন্যান্য নেতারাও তিলোত্তমার বাবা-মায়ের অবস্থান নিয়ে সরব হয়েছেন। মদনের পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিম, কুণাল ঘোষ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সমালোচনায় মুখর।
ফিরহাদ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন। কিছু মানুষ এই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। এর ফলে তাঁদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি হারিয়ে যাবে।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলেন, “যদি দোষীদের ফাঁসি না হয়, তাহলে কি মৃতের বাবা-মা চাইছেন অন্য মহিলাদের ক্ষেত্রেও ধর্ষণ ও হত্যার বিচার না হোক? এটা স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”