এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৭ হাজার কম। এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের লোকজন। কেন ছেলেরা ক্রমশ মাধ্যমিক পরীক্ষার বাইরে চলে যাচ্ছে? উত্তরে ওয়াকিবহাল মহল একাধিক কারণের কথা জানালেন।
কেন কমছে ছাত্রসংখ্যা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একাধিক কারণ এই প্রবণতার জন্য দায়ী। প্রথমত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। বহু পরিবার আর্থিক সঙ্কটে থাকায় কিশোর ছেলেদের স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা পড়াশোনা ছেড়ে রাজ্য বা দেশের বাইরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, চাকরির অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্থিরতা। শিক্ষিত হয়েও কাজ না পাওয়ার বাস্তবতা দেখে অনেক তরুণ আগ্রহ হারাচ্ছে পড়াশোনায়। তাদের ধারণা, ডিগ্রি নিয়েও যদি বেকার থাকতে হয়, তাহলে শ্রমিকের কাজ করে আয় করাই ভালো।
এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা কাল, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এ বছর পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ৯,৮৪,৭৫৩, যার মধ্যে ৪,২৮,৮০৩ জন ছাত্র এবং ৫,৫৫,৯৫০ জন ছাত্রী। লক্ষণীয় বিষয়, ছাত্রদের সংখ্যা ছাত্রীদের তুলনায় প্রায় ১.২৭ লক্ষ কম, যা শিক্ষা মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
শিক্ষাবিদদের উদ্বেগ
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস (ASFHM)-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, শিক্ষা ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে ছাত্রসংখ্যা হ্রাসের মূল কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, WBBSE এই সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে জরিমানা আরোপের মতো কঠোর নীতিতে বেশি জোর দিচ্ছে।
জরিমানার সমালোচনা
চন্দন মাইতি আরও উল্লেখ করেছেন, অ্যাডমিট কার্ডে ভুলের কারণে স্কুলগুলোর ওপর ১৫,০০০ টাকা জরিমানা বসানো হয়েছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করছে। তার দাবি, জরিমানা না করে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করাই প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
ASFHM-এর দাবি ও সুপারিশ
ASFHM দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে কাজ করছে এবং শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ, কাঠামোর উন্নতি এবং ছাত্রবান্ধব নীতির পক্ষে মত দিয়েছে। চন্দন মাইতি অবিলম্বে নতুন WBBSE বোর্ড গঠনের জন্য নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন, যাতে শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে সমাধান করা যায়।
কী বলছে শিক্ষা মহল?
শিক্ষাবিদদের মতে, ছাত্রসংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অসংগতি, পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এই বিষয়গুলোর সমাধান করা, যাতে আগামী দিনে ছাত্রদের স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা কমে।