প্রাইমারি আপার প্রাইমারির পর এবার মাদ্রাসাতেও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। ঘটনায় জেলাশাসকের নির্দেশে জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক SI- সহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে FIR দায়ের হয়েছে তমলুক থানায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দপ্তরের নামে গত বছরের সেপ্টেম্বরের ভুয়ো অর্ডার বের করে মাদ্রাসায় তিন শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নরঘাটের একটি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রে তিনজন শিক্ষা সম্প্রসারক ও সম্প্রসারিকা ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষক -শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করে আসছেন। ২০২২ সালে তাদের নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জেলা সংখ্যালঘু দপ্তরের কাছে আবেদন জানান। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বরের জেলা শাসকের দপ্তরের অধীন জেলা সংখ্যালঘু দপ্তরের জেলা আধিকারিকের সই করা একটি অর্ডার কপি তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ওই দপ্তরের এক SI-সহ বিশ্বরূপ বিশ্বাস পাঠান বলে অভিযোগ। তারপর দীর্ঘদিন ধরে অরিজিনাল কপি চেয়েও পাননি তারা। সন্দেহ হতে ওই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক সংখ্যালঘু দপ্তরের জেলা আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে এলে সেই সরকারি অফিসার বিপ্লব সরকারের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। তিনি দেখেন তাঁর সই ও দপ্তরের স্ট্যাম্প জাল করা হয়েছে। তিনি পুরো ঘটনা জেলাশাসককে জানান। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ওই ঘটনায় তমলুক থানায় FIR করেছেন জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক অফিসার বিপ্লব সরকার।
যানা যায়, এই মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। শিক্ষা সম্প্রসারক ও সম্প্রসারিকা ছ'জন। গত ১৩ জানুয়ারি ওই মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের মুখ্য শিক্ষা সম্প্রসারক শেখ আকসার আহমেদ তমলুকে সংখ্যালঘু বিষয়ক অফিসে আসেন। তিনি জেলা আধিকারিক বিপ্লব সরকারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মাদ্রাসায় সদ্য নিযুক্ত তিনজন শিক্ষা সম্প্রসারক ও সম্প্রসারিকার অ্যাপ্রুভালের আবেদন জানান। ২০২৪ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশিকার ভিত্তিতে ওই মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রে সাবির মল্লিক, রেবতী সেনাপতি ও পম্পা সামন্ত নামে তিনজনকে নিয়োগ করা হয় বলে আকসার সাহেবের দাবি। ওই জেলা অফিসার অর্ডার কপি দেখেই হতবাক। জেলা থেকে এভাবে নিয়োগের অর্ডার হয় না। শিক্ষা সম্প্রসারক, সম্প্রসারিকা নিয়োগের অর্ডার রাজ্য থেকেই হয়। জানা গিয়েছে জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক অফিসে বিশ্বরূপ বিশ্বাস নামে একজন SI (মাদ্রাসা) আছেন। মুখ্য শিক্ষা সম্প্রসারকের দাবি, তিনি বিশ্বরূপবাবুর কাছ থেকেই নিয়োগ সংক্রান্ত অর্ডার কপি পেয়েছেন। একই দাবি করেছেন এক শিক্ষকও। তবে জেলা সংখ্যালঘু দপ্তরের আধিকারিক দাবি করেছেন, তাঁর সিল ও সই জালিয়াতি করে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হতেই জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এস আই সহ ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তমলুক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, জেলা সংখ্যালঘু দপ্তরের আধিকারিক যেখানে ভুয়ো নিয়োগপত্র বলে দাবি করছেন তাহলে তার সই স্ট্যাম্প জাল করলো কে? এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চায়নি অভিযুক্ত এস আই বিশ্বরুপ বিশ্বাস।
সংবাদদাতা- চন্দন সেনাপতি