মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়ালেন তাঁর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার মামলায় শুক্রবার লোকসভা থেকে মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পর পরই দুপুরে কার্শিয়ং থেকে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘটনার 'ধিক্কার' জানান মুখ্যমন্ত্রী। মহুয়ার পাশে থেকে তৃণমূলনেত্রীর বার্তা, 'দল মহুয়ার পাশে আছে, থাকবে।' পাশাপাশি, বিজেপিকে নিশানা করে মমতার মন্তব্য, 'ভোটে মহুয়াকে পরাজিত করতে না পেরে প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে বিজেপি। ধিক্কার জানাচ্ছি। গণতন্ত্রের লজ্জা। সংসদের জন্য দু:খের দিন।'
সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে। গত দেড় মাস ধরে এই নিয়ে সরগরম রাজনীতির ময়দান। যদিও প্রথমে এই বিতর্কে প্রথম দিকে মহুয়ার সঙ্গে দূরত্ব রচনা করেছিল তৃণমূল। কুণাল ঘোষ জানিয়েছিলেন, এটা মহুয়ার নিজের লড়াই। পরে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন জানান, এথিক্স কমিটির রিপোর্টের পরই দল যা বলার বলবে। যার জেরে মহুয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মহুয়াকে আবার টিকিট দেওয়া হবে কিনা, এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে, মহুয়া নিজের লড়াই নিজেই লড়ার জন্য যথেষ্ট। এর অব্যবহিত পরই মহুয়াকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে নীরব ছিলেন মমতা। কয়েক দিন আগেই নীরবতা ভেঙে মমতা বলেছিলেন, 'ওদের (বিজেপি) প্ল্যান এখন মহুয়াকে তাড়ানো। তিন মাস আর বাকি আছে (সংসদের মেয়াদ শেষ হতে)। মহুয়া যেগুলি ভিতরে বলত, এ বার সেগুলিই বাইরে বলবে। মূর্খ না হলে ভোটের তিন মাস আগে কেউ এই কাজ করে।' শুক্রবারও মহুয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়ে লড়াই জারি রাখার কথা বললেন মমতা।
মহুয়াকাণ্ডে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, '৪৯৫ পাতার রিপোর্ট পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। আধ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা করা হল। রাজনৈতিক ভাবে লড়তে পারে না বিজেপি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এক জন মহিলাকে যে ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, ধিক্কার জানাচ্ছি।'
বহিষ্কারের পরই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মহুয়া। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, তাঁকে হেনস্থা করা হতে পারে। এমনকী, শনিবারই তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা দিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহুয়া। বলেছেন, 'টাকা বা উপহার নেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই।'
মহুয়াকাণ্ডে সংসদে বিরোধী ঐক্যের ছবিও উঠে এসেছে। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী। সরব হয়েছেন লোকসভা কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও। সংসদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জমায়েত করেন বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র নেতারা। ক'দিন আগেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর জোটের বৈঠক স্থগিত হওয়া ঘিরে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এই আবহে মহুয়াকে ঘিরে জোটের এ হেন ঐক্যের ছবি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।