Advertisement

Mamata Banerjee: মমতা হঠাত্‍ কেন 'শ্রমশ্রী' ঘোষণা করলেন? অতীতের ৬ স্কিমই কিন্তু 'গেম চেঞ্জার' হয়েছে

ঠিক যেমন ২০২১ সালে ভোটের আগে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্যের সব মহিলা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। পরবর্তীকালে তা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। সে বারও বিরোধীরা বিরোধিতা করে পারেননি। উল্টে পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, বিজেপি, কংগ্রেস, বামেরাও ভোটে জিততে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো স্কিমের প্রতিশ্রুতি ঘোষণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রতিবেদনে মমতার বাছাই করা ৬টি স্কিম নিয়ে আলোচনা করা যাক, যা আক্ষরিক অর্থেই বাংলায় ভোটের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৬টি স্কিম রাজনীতিতে 'গেম চেঞ্জার'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৬টি স্কিম রাজনীতিতে 'গেম চেঞ্জার'
অরিন্দম গুপ্ত
  • কলকাতা ,
  • 19 Aug 2025,
  • अपडेटेड 1:05 PM IST
  • এক ঢিলে একাধিক পাখি!
  • মমতার বাছাই করা ৬টি স্কিম নিয়ে আলোচনা
  • ২০১৩ সাল থেকে রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করে

আবারও বিরোধীদের 'বাড়া ভাতে ছাই'? 'ভাতার রাজনীতি'বলে চিত্‍কার করেও মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বারবার। চুম্বকে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি। এক ঢিলে একাধিক পাখি! ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে, এই দাবিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দিনরাত নিশানা করছেন মমতা। ২০২৬-এর বিধানভা ভোটে বাঙালি আবেগকেই যে তিনি মূল ন্যারেটিভ করতে চাইছেন, তা মোটামুটি স্পষ্ট। যার নির্যাস, আরও একটি স্কিম ঘোষণা, শ্রমশ্রী। এই স্কিমে ভিনরাজ্য থেকে বাংলায় ফিরে আসা শ্রমিকদের পরবর্তী কাজ না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেন মমতা। তাত্‍পর্যপূর্ণ বিষয় হল, শ্রমশ্রী প্রকল্পের সমালোচনা করে নানা কটাক্ষ করলেও, সম্পূর্ণ বিরোধিতা কিন্তু করতে পারলেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। 

শ্রমশ্রী নিয়ে শুভেন্দু বললেন, '৫ হাজার টাকায় সংসার চলে না। পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয় করেন।  ৫ হাজার টাকায় কিছু হয় না, যারা ৫ হাজার টাকা প্রতিদিন রোজগার করেন। তাও তো আপনি ৬ মাসের জন্য দেবেন। ভোটের পর বন্ধ হয়ে যাবে। '

ঠিক যেমন ২০২১ সালে ভোটের আগে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্যের সব মহিলা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। পরবর্তীকালে তা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। সে বারও বিরোধীরা বিরোধিতা করে পারেননি। উল্টে পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, বিজেপি, কংগ্রেস, বামেরাও ভোটে জিততে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো স্কিমের প্রতিশ্রুতি ঘোষণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রতিবেদনে মমতার বাছাই করা ৬টি স্কিম নিয়ে আলোচনা করা যাক, যা আক্ষরিক অর্থেই  বাংলায় ভোটের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার হয়েছে। 

শ্রমশ্রী স্কিমের সরাসরি বিরোধিতা করতে পারছে না বিজেপি-ও 

ভিনরাজ্য থেকে বাংলায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বড় ঘোষণা করলেন মমতা। তা হল, প্রতিমাসে তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হল, কেন এই স্কিমটিও মাস্টার স্ট্রোক হিসেবে গণ্য করা যায়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলা থেকে যে সব পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজে যান, তাঁদের একটি বড় অংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। নির্বাচন কমিশন SIR প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছে বাংলায়। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, SIR প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশি ভুয়ো ভোটারের নামে ভোটার তালিকা থেকে মানুষের নাম বাদ দেওয়ার কৌশল বলে অভিযোগ করছে বাংলার শাসকদল। 

Advertisement

ঠিক এই জায়গাতেই শ্রমশ্রী স্কিম ঘোষণা করে খেলা ঘোরানোর চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখুন, এই স্কিমের বিরোধিতা করলে বিজেপি-র চাপ আছে। তাহলে বাংলায় বিজেপি-র ভাবমূর্তি হয়ে যাবে, বাঙালি বিরোধী। আবার যে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক পুরোটাই কার্যত মমতার দিকে, তা আরও পোক্ত হতে পারে। বিজেপি এই স্কিমের সরাসরি বিরোধিতা করলে মমতা তখন পাল্টা প্রচার করবেন, বিজেপি বাঙালি শ্রমিকদের সাহায্যের বিরোধিতা করছে। বাঙালি বিরোধী দল। 

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কামাল একুশে দেখেছে বাংলা

মহিলা ভোটাররা যে পাশা উল্টে দিতে পারেন, তা বুঝতে এক মিনিটও অসুবিধা হয়নি দুঁদে রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিমঙ্গে ৪ কোটি ৪৪ লক্ষ মহিলা ভোটার। স্বাভাবিক ভাবেই তারপর থেকে আরও বেড়েছে। প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার রাজ্যে অর্ধেকই মহিলা ভোটার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই মহিলা ভোটব্যাঙ্ক মমতার দিকে চলে গিয়েছিলেন জাস্ট একটি স্কিমেই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এতটাই সফল যে, বিজেপি সহ বিরোধীরাও এখন মহিলাদের প্রতিমাসে ভাতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ক্ষমতায় এলে। ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরনের ভাতা দেওয়া চলছেও। 

সবুজসাথীর সাইকেলে বাজিমাত ২০১৬-র ভোটে

এই প্রকল্পে পড়ুয়ারা ক্লাস নাইনে উঠলেই রাজ্য সরকার বিনামূল্যে সাইকেল দেয়। এই স্কিমটি ছিল ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মমতার আরেক গেম চেঞ্জার সিদ্ধান্ত। রাজ্যের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী নবম শ্রেণিতে উঠলেই এই প্রকল্পে সাইকেল পান। এতে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা হল, তেমনই বাড়ির বড়োরাও সেই সাইকেল পরোক্ষ ভাবে পেলেন। সরকারের দেওয়া ফ্রি সাইকেল ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি মা-বাবাও চালান। গ্রামাঞ্চলে পরিবহণ ব্যবস্থায় একটি বেনজির বদল বলা যেতে পারে। কারণ, সকলের মোটরবাইক কেনার মতো সামর্থ্য থাকে না।

স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডেও মহিলা মন

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পান। ২০১৬ সালে 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। পরিবারের মহিলাদের নামে একটি করে 'স্বাস্থ্যসাথী' কার্ড তৈরি করা হয়। বলা হয়, সরকারি বা বেসরকারি, যে কোনও হাসপাতালে সেই কার্ড দেখালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখানেও টার্গেটে সেই মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। কারণ, শুধুমাত্র পরিবারের মহিলাদের নামেই এই কার্ড করা যায়।  

কন্যাশ্রীর সাফল্য

ক্ষমতায় যখন এলেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ছিলই। পরে তা আরও পোক্ত হয়। এরপর মমতার নজরে আসে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। ২০১৩ সাল থেকে রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করে। প্রথমে ছিল শুধু স্কুল স্তরের ছাত্রীদের জন্য। পরে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কেন কন্যাশ্রী শুরু করা হয়, সেই ভাবনার কথাও ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, 'আমি দেখলাম, অনেক বাবা-মা চিন্তা করেন। তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রেশার দেন বাচ্চাদের উপরে। তারা পড়াশোনা করতে পারে না। সেই জন্য তাদের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়টাও কভার করা উচিত। আজ কিন্তু সরকারি স্কুলে সবাই কন্যাশ্রী।’ 

Read more!
Advertisement
Advertisement