পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসন প্রতিষ্ঠান প্রধান কাণ্ডারী ছিলেন তিনি। ছিলেন রাজ্যের বাম শাসনকালের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীও। একটানা ২৩ বছর ছিলেন সেই পদে। তিনি রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু (Jyoti Basu)। তাঁর শাসনকালে বিবিধ উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে রাজ্য। বামপন্থীরা দাবি করেন তাঁর আমলে উন্নয়নের নতুন ছোঁয়া পেয়েছিল বাংলা। অন্যদিকে আবার লালঝান্ডার বিরোধীরা বারেবারেই তাঁর সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে আজও বামেদের সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বাস্তবেই জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে রাজ্যে এমনকিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছিল, যা আজও তাড়া করে বেড়ায় বামেদের।
মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড
সালটা ঠিল ১৯৭৯। তার দুবছর আগেই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বামেরা। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান তথা অধুনা বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে আসা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্রয় নেন পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে (Marichjhapi Massacre)। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন সরকার সেই উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদের চেষ্টা করে। অভিযোগ, উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদের জন্য প্রথমে পুলিশ দিয়ে গোটা দ্বীপ ঘিরে ফেলা হয়, যাতে তাঁরা খাবার, পানীয় জল ও ওষুধের জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামে যেতে না পারেন। এইভাবে কয়েকদিন চলার পর ৩১ জানুয়ারি পুলিশ দ্বীপে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে বলে অভিযোগ। এছাড়া অনাহারে ও রোগে ভুগেও অনেকের মৃত্যু হয়েছিল বলে শোনা যায়।
বিজন সেতু হত্যাকাণ্ড
মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ডের পর ৩ বছর কেটে গিয়েছে। সেই দিনটা ছিল ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল। কলকাতার বালিগঞ্জের কাছে ১৭ জন আনন্দমার্গীকে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। যা বিজন সেতু হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত (Bijon Setu Massacre)। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন সন্ন্যাসী ও ১ সন্ন্যাসিনী ছিলেন। প্রকাশ্য দিবালোকে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বহু মানুষ। শুধু বাংলা নয় গোটাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ঘটনা।
২১শে জুলাই
তারপর কেটে যায় এক দশকেরও বেশি সময়। আসে ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই (21 July 1993)। কলকাতায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দেয় তৎকালীন যুব কংগ্রেস। সেই সময় যুব কংগ্রেসের নেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই নেতৃত্বে আয়োজিত হয় গোটা কর্মসূচি। অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলে হঠাৎই গুলি চালায় পুলিশ। মৃত্যু হয় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। রক্তে ভেসে যায় কলকাতার রাজপথ। পরবর্তী সময় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেদিনের সেই ঘটনাকে স্মরণ করে আজও শহীদ দিবস পালন করেন তিনি।
তবে এই সমস্ত ঘটনার পরেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে জ্যোতি বসুর ভূমিকা ও অবদান যে চিরদিনই স্মরণীয় হয়ে থাকবে তা এককথায় স্বীকার করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।