
সুন্দরবনেও দূষণ। নির্জন দ্বীপের বাতাসেও ভর্তি মাইক্রোপ্লাস্টিক। সম্প্রতি IISER কলকাতার গবেষণায় উঠে এমনই তথ্য। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই গবেষণা হয়েছিল। আটদিন সমীক্ষা চলে। হয় হাই ভলিউম এয়ার স্যাম্পলার ব্যবহার করে সুন্দরবনের বাতাস পরীক্ষা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বাতাসে থাকা অতি সূক্ষ্ম প্লাস্টিক কণা খুঁজে বের করা। রেজাল্টে দেখা গেল সুন্দরবনের বাতাসও আর 'মুক্ত' নয়। আমার, আপনার প্লাস্টিক ব্যবহারের বদ অভ্যাসে নষ্ট হচ্ছে সেখানকার বাতাসও।
গবেষকদের টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ড. গোপালা কৃষ্ণ দর্ভ। সঙ্গে ছিলেন ড. অভিনন্দন ঘোষ, অভিষেক মণ্ডল, জয় কর্মকার ও স্বাধীন মজুমদার।
পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেন, প্রতি ১০০ ঘনমিটার বাতাসেই গড়ে ১০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ভাসছে। সুন্দরবনের মতো নির্জন অঞ্চলের জন্য এই সংখ্যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর।
ড. ঘোষ বলেন, 'সুন্দরবনের বাতাস আর বিশুদ্ধ নয়। শহরের প্লাস্টিক এখন হাওয়ার সঙ্গে ভেসে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও চলে আসছে।'
পরীক্ষায় দেখা যায়, বাতাসে থাকা প্লাস্টিক কণার বেশিরভাগই ফাইবারের মতো। রঙ কালো। অর্থাৎ, মূলত প্লাস্টিক ব্যাগ বা পুরনো জালের টুকরো থেকে এগুলির উৎপত্তি।
অভিষেক মণ্ডল জানান, μ Raman যন্ত্র দিয়ে তাঁরা স্যাম্পেল টেস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, এগুলি মূলত পলিপ্রপিলিন ও পলিথিন জাতীয় পদার্থ। প্যাকেট, কাপড়, মাছ ধরার জাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষক জয় কর্মকার জানালেন, মূলত শহরাঞ্চল থেকেই বাতাসে ভেসে ভেসে এগুলি উড়ে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই কণা কোনদিকে যাবে, তা বায়ুপ্রবাহের দিক ও কুয়াশার উপর নির্ভর করে। কুয়াশা হলে এই কণাগুলি গাছে, পাতায় আর মাটিতে জমে যায়।
ড. দর্ভ জানালেন, 'প্লাস্টিক এখন বাতাসেরই একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। বাতাসের মাধ্যমেই মাইক্রোপ্লাস্টিক ডাঙা থেকে সমুদ্র, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।'
বিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরবনের সুরক্ষায় এখন শুধু জল নয়, বাতাসের কোয়ালিটিতেও নজর দিতে হবে। আর প্রত্যেকে ব্যক্তিগত স্তরে প্লাস্টিক ব্যবহার না কমালে, তা সম্ভব নয়, মত বিশেষজ্ঞদের।